‘এখানে তো শোকসভা না হয়ে অবন্তিকার সংবর্ধনা হতে পারত’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার স্মরণে শোকসভার আয়োজন করেছবি: প্রথম আলো

‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ছিল মেধাবী ও প্রাণবন্ত। মনে ক্ষোভ নিয়ে সে চলে গেছে। আমরা তাকে ভুলতে পারব না।’

আজ মঙ্গলবার এভাবেই অবন্তিকাকে স্মরণ করেছেন তাঁর বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই শোকসভার আয়োজন করেন। বিভাগের শিক্ষক মাহমুদ আমীর এভাবে অবন্তিকার স্মৃতিচারণ করে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন।

সভায় অবন্তিকার সহপাঠী  ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এখানে তো শোকসভা হওয়ার কথা ছিল না। হয়তো অবন্তিকার জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংবর্ধনার আয়োজন করতে পারত।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে অবন্তিকার স্মরণে প্রথমে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে অবন্তিকার সহপাঠীদের বানানো একটি ভিডিও দেখানো হয়। ক্যাম্পাসে আন্দোলনে অংশ নেওয়া, পশুদের উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হয় এই ভিডিওতে।

দেখতে দেখতে মিলনায়তনে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা অপরাধীদের বিচার দাবি করেন। বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আককাস সভায় সভাপতিত্ব করেন।

একজন ছাত্রী কেন আত্মহননের পথ বেছে নেবেন—এমন প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে চার মাস আগে প্রশাসনের কাছে দেওয়া অবন্তিকার আবেদনে গাফিলতি, অবহেলা করা হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘এ জন্য আমি দগ্ধ। তারা যদি সক্রিয় থাকত, অন্তত আমি সন্তুষ্ট থাকতাম।’

আরও পড়ুন

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তফা আহমেদ বলেন, ‘এক ব্যাচ সিনিয়র হয়েও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক রেখেছে। সব আন্দোলনে সামনে ছিল। সে নদীর মতো ধাবমান ছিল। একটা ঝড় গেছে, সে ভেবেছিল দ্রুত এই কালো ঝড় চলে যাবে। কিন্তু ঝড় শেষ হওয়ার আগেই সে চলে গেল।’

কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অবন্তিকার মানসিক অসুস্থতার খবর উল্লেখ করে মোস্তফা আহমেদ বলেন, তাঁর কোনো মানসিক অসুস্থতা ছিল না। অপরাধীরা যত শক্তিশালী হন না কেন তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা যে বেদনা অনুভব করছি, এর থেকে শতগুণ বেদনা তার মা অনুভব করছে। তদন্ত কমিটি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিবেদন দেবে।’

ক্যাম্পাস কেন নিরাপদ হলো না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসরিক হাসান।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হলে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ জানান তিনি।  

আইন অনুষদের ডিন মাসুম বিল্লাহ বলেন, অবন্তিকার আইনি লড়াইয়ে আইন বিভাগ থাকবে তাঁর পাশে থাকবে।

গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। অবন্তিকার কয়েকজন বন্ধু বলেন, তিনি ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ওই পোস্টে একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেছেন তিনি। সেখানেই আত্মহত্যার কথা বলেন অবন্তিকা।

আরও পড়ুন