বন্ধুকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে কেন খুন, আদালতে জানাল কিশোর
চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে গত শুক্রবার কিশোর নূর নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে নূর নবীর কিশোর বন্ধু।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। পড়াশোনা বা কোনো কাজ করে না সে। মাসখানেক আগে মায়ের ২০ হাজার টাকা চুরি করে সেই কিশোর। সেই টাকা খরচ করে ফেলায় কীভাবে মাকে টাকা ফেরত দেবে, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তখন প্রতিবেশী নির্মাণশ্রমিক কামরুল ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই কিশোর। কামরুলের পরামর্শে প্রতিবেশী কিশোর বন্ধু নূর নবীকে (১৪) নিজের জন্মদিন উদ্যাপনের কথা বলে ঢাকার বাইরে নিয়ে যায় ওই কিশোর। এরপর নূর নবীর পরিবারের কাছে দাবি করা হয় মুক্তিপণ। চাহিদামতো মুক্তিপণ না পেয়ে, নিজেরা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কিশোরকে খুন করে কামরুলসহ সেই কিশোর।
গত শনিবার রাতে জামালপুর থেকে ১৬ বছরের ওই কিশোরকে ধরে চট্টগ্রামে আনা হয়। তাকে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই বর্ণনা দেয় ওই কিশোর। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে গাজীপুরে শিশু ও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। নির্মাণশ্রমিক কামরুল পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে নূর নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন বৃহস্পতিবার নূর নবীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অজ্ঞাতনামা এক যুবক। মুঠোফোনে আর্থিক সেবার একটি নম্বরে ওই দিন পাঁচ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু অপহরণকারীরা সেই টাকা দোকান থেকে নিয়ে যায়নি। ২১ আগস্ট জন্মদিন উদ্যাপন করতে ট্রেনে করে ফেনী আসে দুই বন্ধু। পরে কামরুলসহ দুই বন্ধু চট্টগ্রাম আসে। পরদিন নূর নবীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর তার প্রতিবেশী বন্ধু নূর নবীকে খুন করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানন্দি দিয়েছে। এ কাজে তাকে কামরুল সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে। কামরুলকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
ওসি আরও বলেন, জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার কিশোর স্বীকার করেছে, তার বাবা নেই। ঘরে মা ও বোন আছে। সে কিছু করে না। মায়ের জমানো ২০ হাজার টাকা মাসখানেক আগে চুরি করে সে। চুরি করা টাকা সে বন্ধুদের নিয়ে খরচ করেছে। এখন মা টাকাগুলো চাইলে কীভাবে দেবে, চিন্তায় পড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাসার পাশে থাকা প্রতিবেশী কামরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করে।
ওই কিশোরের বরাত দিয়ে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, কামরুল ওই কিশোরকে পরামর্শ দেয় কিশোরের বন্ধু ১৪ বছর বয়সী নূর নবীকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে। এরপর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করবে তারা ৫০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা মায়ের কাছ থেকে চুরি করা টাকা ফিরিয়ে দেবে। বাকি টাকা তারা দুজনে ভাগ করে নেবে। কামরুলের পরিকল্পনায় রাজি হয়ে যায় ওই কিশোর। পরিকল্পনামতো নূর নবীকে ওই কিশোর বলে, সামনে তার জন্মদিন। এবার তারা দুই বন্ধু ঢাকার বাইরে পালন করবে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের সঙ্গে কামরুল থাকবে। বিষয়টি নূর নবী যাতে পরিবারের কাউকে না জানায়। এতে নূর নবী রাজি হয়। এরপর তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কিশোরের মা প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছেন মানুষ করতে। কিন্তু সে কথা শোনে না। এখন তিনি নিজেই ছেলের বিচার চান।
মামলার বাদী ও নিহত নূর নবীর বড় ভাই রমজান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সামান্য টাকার জন্য যার সঙ্গে তার ভাই খেলাধুলা করত, সেই কিশোর বন্ধু তার শরীরে ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। অপরাধীর ফাঁসি চান তিনি।