ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরে আহত চিকিৎসক বাবা লাইফ সাপোর্টে

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মারধর থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন দন্তচিকিৎসক কোরবান আলীছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে এক পথচারীকে বাঁচাতে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করেন ছেলে। এ কারণে ছেলে আলী রেজাকে মারধর করতে আসে তারা। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন বাবা কোরবান আলী (৬০)। গত শুক্রবার নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত দন্তচিকিৎসক কোরবান আলী নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।

ছেলে আলী রেজা আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকার জে লাইন দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তখন দুজন স্কুলছাত্র তাঁর সাহায্য চায়। তাদের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ৯৯৯-এ কল দেন। পুলিশ এসে একজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় ইফতারি কিনতে বের হন আলী রেজা। তখন তাঁকে পেয়ে মারধর করতে থাকেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন তাঁর বাবা। একপর্যায়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ইটের আঘাতে তাঁর বাবা মাথায় গুরুতর আঘাত পান। প্রথম তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর বাবার অবস্থা সংকটাপন্ন।

আলী রেজা দাবি করেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই যুবলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী। তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো পূর্বশত্রুতা নেই। আলী রেজা নগরের একটি মাদ্রাসায় ফাজিলে পড়েন।

এ ঘটনায় শনিবার আলী রেজা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। এতে আসামি হিসেবে মো. সামির, মো. রিয়াদ, সোহেল ওরফে বগা সোহেল, মো. আকিব, মো. অপূর্ব, মো. নিশান, মো. রাজু, মো. সাগর, মো. বাবু, মো. রাজু, মো. সংগ্রাম ও মো. সাফায়েতের নাম উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে রাখা হয়। এলাকায় তাঁরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য গোলাম রসুলকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি কল ধরেননি।

জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রাব্বানী আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নগরের একটি নামকরা স্কুলের দুই ছাত্র আলী রেজার সাহায্য চান। তাদের বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। আর তাঁকে বাঁচাতে এসে তাঁর বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগরে অন্তত ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেক দলে রয়েছে ৫ থেকে ১৫ জন। পুলিশের হিসাবে, নগরজুড়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৬৪ জন ‘বড় ভাই’। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি।

আরও পড়ুন

চলতি বছরের শুরুতে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, নগরে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের অনেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অভিভাবকদের অগোচরে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের ‘বড় ভাই’দের প্ররোচনায় জড়াচ্ছে অপরাধে। শুরুতে তারা হিরোইজম (বীরত্ব) দেখানোর জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরে তা থেকে বের হতে পারে না।

আরও পড়ুন