৭৭ দিন ধরে নিখোঁজ সাবরেজিস্ট্রার বাদলের সন্ধান চায় পরিবার

স্বামী বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের সন্ধান চেয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী জ্যোৎস্না রানী বিশ্বাস (বামে)। ঢাকা, ৮ জুলাই
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের সন্ধান চায় তাঁর পরিবার। তিনি ৭৭ দিন ধরে নিখোঁজ। গত ২০ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুরের নিজ গ্রাম কারফা থেকে নিখোঁজ হন বাদল কৃষ্ণ। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গ্রামে এসেছিলেন তিনি।

বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের সন্ধানের দাবিতে আজ শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাদল কৃষ্ণ নিখোঁজের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু তদন্তই করে যাচ্ছে। তাঁর কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে তাঁর পরিবার উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে বাদলের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

এ সময় নিখোঁজ বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের স্ত্রী জোৎস্না রানী সরকার বলেন, ঘটনার দিন (২০ এপ্রিল) বাদল কৃষ্ণ স্থানীয় বাজারে গিয়েছিলেন। বাজার থেকে ফিরে পুকুরে মাছের খাবার দিতে গিয়ে আর ফেরেননি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁর কোনো সন্ধান দিতে পারছেন না। একজন মানুষ এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন, তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না, এটা হতে পারে না।

বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের চাচা সাবেক যুগ্ম সচিব ননী গোপাল বিশ্বাস মানববন্ধনে বলেন, সরকারকে অনুরোধ জানাব তাঁকে যেন খুঁজে বের করা হয়। সরকার চাইলে এটা অসম্ভব কিছু নয়।

ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যাপক শ্রী হরসিৎ বালা বলেন, এভাবে একজন মানুষ হারিয়ে যাবেন, একটি স্বাধীন দেশে এমন হতে পারে না। বাদল কৃষ্ণকে খুঁজ বের করার দায়িত্ব সরকারের। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁকে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের সন্ধানের দাবিতে মানবন্ধন করে পরিবার ও এলাকাবাসী। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ৮ জুলাই
ছবি: সংগৃহীত

মানববন্ধনে বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের দুই ছেলে অংকন বিশ্বাস ও অংকিত বিশ্বাস, বড় দুই ভাই রমণী রঞ্জন বিশ্বাস ও খোকন চন্দ্র বিশ্বাসসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার চক্রবর্তী, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ও সহসভাপতি জগন্নাথ হালদার, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিত্র, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায় প্রমুখ।

বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাসের নিখোঁজের ঘটনাটি তদন্ত করছে বরিশাল জেলা পুলিশ। জানতে চাইলে বরিশালের বাকেরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ সরদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে বাদল কৃষ্ণ নিখোঁজের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাঁকে কেউ অপহরণ করেছে বা হত্যা করেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তিনি আত্মগোপন করেছেন কি না। এ বিষয়েও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব দিক বিবেচনা করে বাদল কৃষ্ণের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।