সবাই মিলে কাপ্তাই হ্রদ দখল

ক্ষমতাসীন দলের লোকদের পাশাপাশি দখলে জড়িত আছেন সাধারণ ভূমিদস্যুরাও। পৌরসভার হিসাবে, দখলদারের সংখ্যা অন্তত ৭ হাজার।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ সরু হয়ে গেছে দখলে। বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে এর শরীরজুড়ে। গতকাল শহরের পুলিশ সুপারের কার্যালয় এলাকায়
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

শহরের শরীরটা সুস্থ রাখার দায়িত্ব পৌরসভার। ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি জলাধার বা হ্রদের দখল ঠেকানো, দূষণ রোধেও এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র নিজে রক্ষক হয়ে হ্রদ দখল করে বসে আছেন।

জেলা যুবলীগের সভাপতি মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী জেলা শিল্পকলা ঘাট এলাকায় হ্রদের ওপর পাকা ভবন করছেন। ঘাটের পাশে এক বছর ধরে এই ভবন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত উঠে গেছে।

শুধু এই ভবন নয়, রাঙামাটি শহরে হ্রদ দখল করে নির্মিত হয়েছে পুলিশের অফিসার্স মেস ও পুলিশের করা পলওয়েল পার্ক, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার, ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা। চোখের সামনে যখন হ্রদ দখল করে প্রভাবশালীদের এসব স্থাপনা উঠছে, তখন বসে নেই সাধারণ ভূমিদস্যুরাও। কাপ্তাই হ্রদ দখল করে স্থাপনা নির্মাণে তাঁদের মধ্যেও চলছে একধরনের প্রতিযোগিতা। অর্থাৎ রাঙামাটি শহরের ‘ছোট-বড়’ সবাই মিলে দখল করছেন কাপ্তাই হ্রদ।

আরও পড়ুন

হ্রদের জায়গায় ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, তাঁর ভবনটি হ্রদের ভেতরে বেশি যায়নি। যেটুকু গেছে, তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে বলে মনে করেন না তিনি।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯–এর দ্বিতীয় তফসিলের ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সরকারি জলাধার দূষিত করার প্রয়াস চালান বা দূষিত করেন বা দূষণের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে পৌরসভা তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। অপরদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত কোনো জায়গা ভরাট কিংবা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

আরও পড়ুন
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ বহুতল কনভেনশন হল। এর আশপাশে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ কাঁচাপাকা বসতঘর
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বাঁধের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি ডুবে যায়, যা ওই এলাকার মোট কৃষিজমির ৪০ শতাংশ। রাঙামাটির বরকল উপজেলার বড় হরিণা এলাকা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রান্তে হ্রদের সীমানা। এরপর ভারতের মিজোরামেও এর বিস্তৃতি আছে। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলীর উৎপত্তি। রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি এলাকাজুড়ে হ্রদটির অবস্থান। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর।

রাঙামাটি পৌর এলাকায় হ্রদের জায়গা সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। আর কিছু জায়গা দখল হয়েছে কাপ্তাই উপজেলায়। তবে কতটা জায়গা দখল হয়েছে, কারা জড়িত, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা কোনো সংস্থার কাছে নেই।

২০১৯ সালে জাতীয় নদী কমিশন অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা করে। তালিকায় পৌরসভার ২২ জন এবং কাপ্তাইয়ের ৮ জন দখলদারের নাম রয়েছে। তবে তাঁদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিকদের নাম নেই। এরপর আর তালিকা হয়নি।

দখলের কারণে নাব্যতা হ্রাস পাওয়া, নৌ চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়া এবং চর পড়ে যাওয়া অন্যতম। এ ছাড়া স্থাপনাগুলোর দূষণও বড় একটি সমস্যা। প্রতিনিয়ত দখলদারদের শৌচাগারের লাইন, ব্যবহার্য পানি ও ময়লা-আবর্জনা হ্রদে গিয়ে পড়ছে, যা হ্রদের প্রাণিকুলের জন্য উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হ্রদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন পৌরসভার শহর–পরিকল্পনাবিদ সুবর্ণ চাকমা। তিনি বলেন, পৌরসভার হিসাবে শহরে মোট হোল্ডিং বা বসতি ২৫ হাজার। এর মধ্যে আড়াই হাজারের মতো বৈধ। বাকি সব স্থাপনা অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে। হ্রদ ও পাড় দখল করে প্রায় সাত হাজার স্থাপনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফাইল ছবি

রাঙামাটির পর্যটনশিল্পের বড় বিকাশ হয়েছে এই হ্রদ ঘিরে। বছরে দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন কাপ্তাই হ্রদে। পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য খাতে এই হ্রদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরের সঙ্গে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৬টির যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই হ্রদ। রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির হিসাবে, অন্তত এক লাখ মানুষ কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল।

হ্রদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ২০২১-২২ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

হ্রদ দখলমুক্ত করার বিষয়ে বিএফডিসির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে এর চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন প্রথম আলোকে জানান, তিনি কয়েক দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছেন। কাপ্তাই হ্রদের দখলের বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানেন না।

ক্রমাগত দখল ও দূষণের কারণে শহর এলাকায় হ্রদের পরিবেশ নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত। দখলের কারণে নাব্যতা হ্রাস পাওয়া, নৌ চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়া এবং চর পড়ে যাওয়া অন্যতম। এ ছাড়া স্থাপনাগুলোর দূষণও বড় একটি সমস্যা। প্রতিনিয়ত দখলদারদের শৌচাগারের লাইন, ব্যবহার্য পানি ও ময়লা-আবর্জনা হ্রদে গিয়ে পড়ছে, যা হ্রদের প্রাণিকুলের জন্য উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাঙামাটি শহরটি পুরোটাই তো হ্রদের মধ্যে। এখানে তো জায়গা নেই। ডিসির বাংলো, এসপির বাংলোও হ্রদে হয়েছে। আমাদের এই ভবন জেলা পরিষদের অর্থায়নে হয়েছে।
রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর

কাপ্তাই হ্রদের দখল প্রসঙ্গে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হ্রদে দখলদারদের যে তালিকা আছে, সেটা আগের। জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া। নতুন নতুন দখলের খবর পেলে তা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবহেলা আছে। নতুন করে এ রকম স্থাপনা ওঠার খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হ্রদ দখল ও দূষণের জন্য বেশ কয়েকজনকে নোটিশ ও জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান, পলওয়েল পার্কের জন্য সতর্ক করা হয়েছে পুলিশকেও।

দখলে পিছিয়ে নেই কেউ

সম্প্রতি রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে কথা হয় শহর–পরিকল্পনাবিদ সুবর্ণ চাকমার সঙ্গে। এই কার্যালয়ের পেছনেই হ্রদের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে পুলিশের অফিসার্স মেস। পাশের শান্তি এলাকায় রয়েছে শ খানেক অবৈধ বসতঘর।

হ্রদের জায়গায় পুলিশ মেস নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম বলেন, পুলিশ মেস যদি হ্রদ দখল করে হয়, তাহলে পৌরসভা ভবনও হ্রদের ওপর। কারণ, দুটি একই লাইনে। তিনি জানান, পুলিশ মেস হয়েছে ছয়–সাত বছর আগে।

জেলা পরিষদের ভবনটি আমি আসার আগে থেকেই হচ্ছে। আমি আসার পর ফ্রেন্ডস ক্লাবের ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করেছি। এ ছাড়া বিশাল হ্রদের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বসতি আগে থেকেই আছে। নতুন করে করার খবর পেলে আমরা বাধা দিই।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

রাঙামাটি শহরের পুরোনো বাসস্টেশন এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন তিনতলা ভবন। ছয় মাস আগে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। ১২ শতক জায়গার ওপর নির্মিত ভবনটির দুই-তৃতীয়াংশের অবস্থান কাপ্তাই হ্রদের পানির অংশে। বাকিটা উঠেছে হ্রদের পাড়ে। হ্রদ দখল করে কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাঙামাটি শহরটি পুরোটাই তো হ্রদের মধ্যে। এখানে তো জায়গা নেই। ডিসির বাংলো, এসপির বাংলোও হ্রদে হয়েছে। আমাদের এই ভবন জেলা পরিষদের অর্থায়নে হয়েছে।’

বাসস্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার গেলে রিজার্ভ বাজার এলাকা। সেখানে জেলা পরিষদ অন্যদের দখলে সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেরাও হ্রদ দখল করে বড় দালান নির্মাণে হাত দিয়েছে। তিন বছর আগে রিজার্ভ বাজার এলাকায় হ্রদের পানির অংশের প্রায় ২০ শতক জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে একটি বহুতল ভবন। এই ভবনেই করা হবে কমিউনিটি সেন্টার। বাজার ফান্ড থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়ে এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীও ক্ষমতাসীন দলের নেতা, কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে আগের চেয়ারম্যান বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বৃষকেতু চাকমার সময়ে এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষাকালে পানি বাড়ায় নিচতলার পিলারগুলো পুরোপুরি পানিতে ডুবে আছে।

জানতে চাইলে জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, বাজার ফান্ডের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে এই ভবন করা হচ্ছে। পৌরসভার অনুমতি আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। উল্লেখ্য, বাজার ফান্ড জেলা পরিষদের একটা সংস্থা, যারা জেলার সব বাজারের ভূমি বরাদ্দসংক্রান্ত বিষয়গুলোর দেখভাল করে।

শিল্পকলা ঘাট এলাকায় দেখা যায়, মেয়র আকবর হোসেনের ভবনটি পুরোপুরি হ্রদের পানিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনতলা পর্যন্ত উঠে যাওয়া ভবনটি উঠবে পাঁচতলা পর্যন্ত। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হবে ভবনটি।

পৌরসভার তবলছড়ি এলাকায় হ্রদের একেবারে ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে আরেকটি ভবন। এই ভবন নির্মাণ করছে ফ্রেন্ডস ক্লাব নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ওই ক্লাবের সভাপতি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। বর্তমানে ভবনটির বেজমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। পানির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পিলারগুলো। বাজার ফান্ড থেকে এই জায়গা বরাদ্দ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে নদী কমিশনের আপত্তির কারণে এখন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে দীপংকর তালুকদার বলেন, ক্লাবটি যেখানে নির্মিত হচ্ছিল, সেটা হ্রদের মূল অংশ নয়। ওভাবে হিসাব করলে সরকারি–বেসরকারি পাঁচ হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।

এ ছাড়া রাঙামাটি রিজার্ভ বাজারে আনিকা হোটেল, মসজিদ মার্কেটসহ অসংখ্য স্থাপনা উঠেছে হ্রদ দখল করে। এসবের নাম নদী কমিশনের তালিকায় নেই।

রাঙামাটি পৌর এলাকা ছাড়াও কাপ্তাই উপজেলার জেটিঘাট এলাকায় হ্রদ দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। তবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হিসাবে, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনার খিয়াংপাড়ায় আটজন হ্রদ দখলদারের নাম রয়েছে। তাঁরা হ্রদের পানিতে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে বিপ্লব মারমা, প্রদীপ দাস, মিলন দে, অং থুই খিয়াং অন্যতম। সরেজমিনেও সেখানে হ্রদের পাড় দখল করে নির্মাণ করা দোকানপাট দেখা গেছে। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদ দখলের প্রবণতা বেশি দেখা যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

কারও নেই কাপ্তাই দখলের অধিকার

কাপ্তাই হ্রদ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা জানতে চাইলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের ভবনটি আমি আসার আগে থেকেই হচ্ছে। আমি আসার পর ফ্রেন্ডস ক্লাবের ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করেছি। এ ছাড়া বিশাল হ্রদের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বসতি আগে থেকেই আছে। নতুন করে করার খবর পেলে আমরা বাধা দিই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই স্থাপনাগুলোর বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। তিনি বিষয়টি দেখবেন।

কাপ্তাই হ্রদের জীববৈচিত্র্য নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা করছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগ। গবেষণায় উঠে এসেছে, হ্রদের যেখানে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, সেখানে মাছ পাওয়া যায় কম। সেখানে দূষণও বেশি। এতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার কাপ্তাই হ্রদ দখলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কি শুধু ফিউচার পার্ক আর ফ্লাইওভার রেখে যাব, নাকি হ্রদ, নদী, সুন্দরবন, শালবন ও সমুদ্রও রেখে যাব, সেই সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। কাপ্তাই হ্রদ আমাদের জনগণের এমন এক সম্পদ, যা হস্তান্তর অযোগ্য। একে সম্পত্তি বিবেচনা করে দখল ও দূষণ করার অধিকার কারও নেই। এই হ্রদ বাঁচাতে না পারলে সংবিধানের ১৮–এর ক অনুচ্ছেদের কোনো মূল্য থাকবে না। যেখানে এ ধরনের সম্পদকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।’