‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে’ আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুদিনেও গ্রেপ্তার নেই
বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে’ আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সন্দেহভাজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ হওয়ায় তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নাম-পরিচয় প্রকাশ হওয়ায় অভিযুক্ত গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে রোববার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সোমবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরুর আগেই ডিটেকশনের (শনাক্তের) ক্ষেত্রে সন্তোষজনক পর্যায়ে চলে যাব। সম্ভব যদি হয়, বাই দিস টাইম (এই সময়ের মধ্যে) দুর্বৃত্তদের অ্যারেস্ট করতে সক্ষম হব, ইনশা আল্লাহ।’
তবে ডিএমপি কমিশনার এমন কথা বললেও পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পরও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়ার ঘটনার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহপাঠীরা ‘অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে পারার’ কথা জানান। তাঁরা বলেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওই যুবক থাকতেন মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে আর হলে দেখা যায়নি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা গেলে মদদদাতাদেরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
রোববার সকালে রমনা বটমূলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসে র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছিলেন, এ ঘটনার তদন্ত হবে। ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থায় আমাদের যাঁরা ছিলেন, দায়িত্ব পালনে তাঁদের কোনো ঘাটতি ছিল কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি সে রকম কিছু পাওয়া যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত শনিবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে দানবীয় ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির মোটিফটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়ে যায়।
ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে পাঁচটার মধ্যে আগুন দেওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে সেটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রূপান্তরিত হয়। মামলাটি থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে।
চারুকলার সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ দেখতে পায়, শনিবার ভোর ৪টা ৪৪ মিনিটে চারুকলার মাঝখানের ফটক টপকে এক ব্যক্তি ভেতরে ঢোকেন। ওই ব্যক্তি কালো টি-শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কালো স্যান্ডেল পরে ছিলেন। তাঁর চুল পেছনে ঝুঁটি বাঁধা ছিল। একই পথে তিনি ৪টা ৪৬ মিনিটে পালিয়ে যান। ওই ব্যক্তি দুটি মোটিফে প্রথমে তরল দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেন। ফুটেজে মোটিফে অগ্নিশিখা দেখা গেছে। তারপর ওই ব্যক্তি যে ফটক দিয়ে ঢুকেছেন, সেই ফটক টপকেই বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে যান।
এদিকে শোভাযাত্রার আগেই ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ নতুন করে বানান চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সময়স্বল্পতার কারণে থার্মোকল বা শোলা দিয়ে নতুন করে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ বানানো হয়। সোমবারের বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় এই মুখাকৃতিও ছিল।