ভিডিও ধারণকারী পালিয়ে কাতারে, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা মেলেনি বায়েজিদের

পদ্মা সেতুর নাট খোলার ঘটনায় মো. বায়েজিদ তালহাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

পদ্মা সেতুর নাট খোলার সেই ভিডিওধারণকারী ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁর নাম কায়সার মামুন (২৬)। তিনি সেই ভিডিও ছড়িয়ে পরার পরদিন কাতারে পালিয়ে গেছেন। আর ভিডিওতে নাট খুলতে দেখা যাওয়া মো. বায়েজিদ তালহার (৩১) কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি তদন্তকারী দল। একটি নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করাই দুজনের উদ্দেশ্য ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এর পরদিন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বায়েজিদকে সেতুর নাট খুলে দর্শকদের উদ্দেশে তুলে ধরতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে ২৬ জুন তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

ওই দিন রাতেই সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক শাহীনুল ইসলাম বাদী হয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় বায়েজিদকে আসামি করার পাশাপাশি এ কাজে সহযোগিতা করায় কায়সারকেও আসামি করা হয়।

কায়সারের আইডি থেকে আপলোড হয় ভিডিওটি

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন বায়েজিদের বন্ধু কায়সার। ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি কায়সারের টিকটক আইডি থেকেই আপলোড করা হয়েছিল।

কায়সারের বাড়ি সাভারের নালিয়াসুর মুশুরিখোলা গ্রামে। বায়েজিদকে গ্রেপ্তারের পরদিন তিনি কাতারে চলে যান বলে সিআইডির সূত্রগুলো জানিয়েছে।

এই মামলায় গ্রেপ্তারের পর বায়েজিদকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।

আরও পড়ুন

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তারের পর বায়েজিদ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও আদালতে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে যে মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদন পেলে দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

সিআইডি জানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন প্রাইভেট কারে বন্ধু কায়সারকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন বায়েজিদ। টোল প্লাজায় টাকা পরিশোধ করে সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় তাঁরা ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী জায়গায় নামেন টিকটক ভিডিও তৈরির জন্য।

আরও পড়ুন

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা মেলেনি বায়েজিদের

নাট খোলার ঘটনায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামে বায়েজিদের গ্রামের বাড়িতে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তখন দাবি করেছিলেন, বায়েজিদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে তদন্তে ভিন্ন কিছু উঠে এসেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে ‘একটি নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করতেই’ বায়েজিদ ও তাঁর বন্ধু মিলে এই ভিডিও করেছিলেন বলে তদন্তে জানতে পেরেছে সিআইডি।

কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বায়েজিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ঘটনার পর বায়েজিদ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত বলে প্রচার করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে পুলিশি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।