গৃহকর্মী সেজে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করতেন তিনি
বাসায় একজন গৃহকর্মীর প্রয়োজন ছিল। তাই নূরজাহান নামের এক নারীকে নিয়োগ দেন মনোয়ার আলী (৬৬)। কাজে যোগ দেওয়ার দুই দিনের মধ্যে মনোয়ার আলীর স্ত্রীকে অজ্ঞান করে নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান ওই গৃহকর্মী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার কোতোয়ালির বাসাবাড়ি লেনের একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো-উত্তর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার বলেন, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ছয় হাজার টাকা বেতনে একজন গৃহকর্মী নিয়োগ দেন মনোয়ার আলী। ১১ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রী রেজিনা রহমান (৫৫) ও গৃহকর্মীকে বাসায় রেখে অফিসে যান। কিছুক্ষণ পর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ে তাঁকে ফোন করে জানান, মা ফোন রিসিভ করছেন না। মেয়ের ফোন পেয়ে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থান পান মনোয়ার আলী। গৃহকর্মী নূরজাহান তাঁকে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে চার লাখ টাকা এবং একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যান।
মনোয়ার আলী প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাঁকে মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হলে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে আসামির হদিস পায়নি। পরে আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়। পিবিআইয়ের তদন্তে খোঁজ মেলে গৃহকর্মী নূরজাহানের।
পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পেশাদার চোর চক্রের সদস্য বিলকিস একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এরপর সুযোগ বুঝে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে পালিয়ে যেতেন তিনি। তাঁর নামে এখন পর্যন্ত রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় চারটি চুরির মামলা হয়েছে। তিনি পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে এ কাজে জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে মো. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, গৃহকর্মী সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে প্রথমে অজ্ঞান করে বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালাতেন। তিনি নূরজাহান, কনা, রুজিনা নামে একাধিক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে চুরি করেছেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায়। তবে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বাবার বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা ব্যবহার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দিলু রোডের ওই বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ওই গৃহকর্মী। চুরি করা স্বর্ণালংকার খিলক্ষেত ও জামালপুরের ইসলামপুর এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন।
পিবিআই জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন।