ছাত্রীনিবাসের পাঠকক্ষের প্রবেশমুখে টেবিল বসিয়ে পড়ছিলেন ছাত্রলীগের এক কর্মী। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা হওয়ায় এক ছাত্রী তাঁকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগের ওই কর্মীর নেত্রী দলবল নিয়ে কক্ষে গিয়ে ওই ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন করেছেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ওই নেত্রী তাঁর পায়ে গরম চা ঢেলে দিয়েছেন ও তাঁর হাত মচকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও ওই নেত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের ৩১৩ নম্বর কক্ষে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে বলা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তরে (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) অধ্যয়নরত। নির্যাতনের ঘটনায় গতকালই হল সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী হলেন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আয়েশা ইসলাম ওরফে মীম।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ছাত্রী বলেন, সোমবার সকাল নয়টার দিকে বঙ্গমাতা ছাত্রীনিবাসের পাঠকক্ষের প্রবেশমুখের জায়গায় টেবিল বসিয়ে পড়ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা ইসলামের এক অনুসারী। এতে পাঠকক্ষে চলাচলে অন্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছিল। ভুক্তভোগী ছাত্রী ছাত্রলীগের ওই কর্মীকে সরে বসার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে নানা হুমকি–ধমকি দিয়ে চলে যান ওই ছাত্রলীগ কর্মী। এরপর সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগী যখন তাঁর কক্ষে (৩১৩ নম্বর) বসে মগে করে চা পান করছিলেন, তখন ১০–১২ জন অনুসারী নিয়ে সেখানে যান ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, কক্ষে গিয়ে আয়েশা ওই ছাত্রীকে অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মগে থাকা গরম চা তাঁর পায়ে ঢেলে দেন আয়েশা। এ সময় ওই ছাত্রীর হাতও মচকে দেন তিনি। ওই ছাত্রীকে নানা হুমকি–ধমকি দেওয়া শেষে আয়েশা দলবল নিয়ে চলে যান। পরে রাতেই হল সুপার নাজমুন নাহার বরাবর বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
ভুক্তভোগী ছাত্রীও প্রথম আলোর কাছে ঘটনার একই বর্ণনা দিয়েছেন। তবে তিনি তাঁর পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়েশা ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা রাজনীতি করি। তাই আমাদের শত্রুর অভাব নেই। যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এমন কিছুই ঘটেনি। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
আয়েশা ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভার অনুসারী। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁকে মুঠোফোনে একাধিক কল ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।
শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের সুপার নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। হল প্রশাসনের সভাও ডাকা হয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।’