পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, অতঃপর সন্দেহের জেরে খুন বন্ধুকে

গ্রেপ্তার নাহিদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মো. আজাদ (১৬) অটোরিকশা চালাত, আর নাহিদ হোসেন (২২) এতে তরকারি বহন করতেন। অটোরিকশায় চলাফেরার মধ্য দিয়েই তাঁদের পরিচয় ও পরে বন্ধুত্ব। একসময় নাহিদ নিজেই একটি অটোরিকশা কেনেন।

এদিকে গত ৩ জানুয়ারি অটোরিকশার ব্যাটারি কিনতে নাহিদ সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই টাকা ছিনতাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় বন্ধু আজাদকে ঘিরে তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। শুধু এ সন্দেহের জেরেই কি না, সেই বন্ধুর হাতে প্রাণ দিতে হলো আজাদকে!

আজ বুধবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার হরিণহাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। পরে দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাব-১–এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় আজাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন নাহিদ। তিনি গাজীপুরের সফিপুর বাজারের ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন। এক মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আজাদকে ডেকে অটোরিকশায় তুলে তরকারি আনার জন্য রওনা হন। পরে কালিয়াকৈরে চান্দাবহ কবরস্থানের মোড়ে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে আজাদকে প্রথমে গলা টিপে ধরেন। পরে গলা কেটে হত্যা করেন।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আজাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন নাহিদ। তিনি গাজীপুরের সফিপুর বাজারের ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন। এক মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আজাদকে ডেকে অটোরিকশায় তুলে তরকারি আনার জন্য রওনা হন। পরে কালিয়াকৈরে চান্দাবহ কবরস্থানের মোড়ে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে আজাদকে প্রথমে গলা টিপে ধরেন, পরে গলা কেটে হত্যা করেন। আজাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পুরুষাঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যান নাহিদ।

জব্দ করা টাকা ও মোবাইল ফোন
ছবি: সংগৃহীত

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, নাহিদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজাদকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কালিয়াকৈরের গোসাত্রার পশ্চিম চকে এক সবজিখেত থেকে কণ্ঠনালি কাটা, পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর র‍্যাব-১ ওই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্ত করে জানা যায়, নিহত আজাদ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হালিম মিয়ার ছেলে। সে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে থাকত ও অটোরিকশা চালাত।

র‍্যাব পরিচালক মোমেন বলেন, আজাদ প্রতিদিনের মতো ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। পরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আজাদের ভাই মরদেহটি শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশটি পাঠানো হয়েছে।

উদ্ধার করা অটোরিকশা
ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আজাদের ভাই। র‌্যাব-১–এর ছায়া তদন্তকারী দল জানতে পারে, আত্মগোপনে থাকা বন্ধু নাহিদই আজাদের হত্যাকারী। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মুঠোফোন, ছিনতাই করা অটোরিকশা ও ৩ হাজার ৫৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ বলেছেন, দুই বছর আগে তিনি কালিয়াকৈরের হরিণহাটি এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে তরকারি বেচাকেনা শুরু করেন। তরকারি বহনের জন্য আজাদের অটোরিকশা ভাড়া নিতেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা মোমেন বলেন, নিজের অটোরিকশা কেনার পর নাহিদ মানিকগঞ্জের আমতলীর একটি সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। গত ৩ জানুয়ারি নাহিদ সেই টাকা নিয়ে আজাদের অটোরিকশায় চড়ে ব্যাটারি কিনতে যান। কিন্তু সফিপুর থেকে আনসার একাডেমি হয়ে এক জঙ্গলের মাঝে রাস্তায় পৌঁছাতেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন নাহিদ। তাঁরা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আজাদকে সন্দেহ করেন নাহিদ।