পুলিশের ছিনতাই হওয়া ৬ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি ৭ দিনেও

আগ্নেয়াস্ত্র
ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন ও শাহজাহানপুর এলাকায় পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ছিনতাই করা আগ্নেয়াস্ত্র সাত দিনেও উদ্ধার করা যায়নি। ছিনতাই হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দুটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি রাইফেল ও একটি গ্যাস গান। এ ছাড়া কিছু গুলিও ছিনতাই হয়েছে।

এসব অস্ত্র ও গুলি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পল্টন ও শাহজাহানপুর থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। দণ্ডবিধিসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দুটির বাদী দুই থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা–কর্মীরা সমবেত হন। সেখানে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে প্ররোচিত হয়ে বিএনপির কর্মীরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা কাকরাইল, নয়াপল্টন ও বিজয়নগরে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে পল্টন থানার কয়েক পুলিশ সদস্য আহত হন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কর্তব্যরত অন্য পুলিশ সদস্যরা শটগান, গ্যাস গান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে একটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি চাইনিজ রাইফেল, একটি গ্যাস গানসহ গুলি ও সরকারি অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় পল্টন থানায় করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্যসচিব সাজ্জাদুল মিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মো. ইউসুফের আদালতে দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিনুল হকসহ গ্রেপ্তার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেন। পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে জখম করে। বলপ্রয়োগ করে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও সরকারি অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অস্ত্র ও গুলি লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

জানতে চাইলে এসআই মো. ইউসুফ গত শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাই হওয়া পিস্তলসহ পাঁচটি অস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা আমিনুল ও যুবদল নেতা সাজ্জাদুল আট দিনের রিমান্ডে আছেন। তাঁরা রিমান্ডে থাকা অবস্থাতেই অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা যাবে। অস্ত্র উদ্ধারের ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

শাহজাহানপুর থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর বিকেল পৌনে চারটার দিকে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলামসহ কয়েক পুলিশ সদস্য দুটি মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। কমলাপুর রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারে সামনে তাঁরা পৌঁছামাত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে দলের নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, ককটেল ও পেট্রল নিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। তবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পরস্পর যোগসাজশে ইটপাটকেল ছুড়ে সরকারি কাজে বাধা দেন। তাঁরা এএসআই সাইফুলসহ দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেন। দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা সাইফুলের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেন।

জানতে চাইলে গতকাল রাতে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাই হওয়া পিস্তলটি উদ্ধার করা যায়নি। এ নিয়ে থানা-পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত করছে। পিস্তল ছিনতাইয়ে কারা জড়িত, তা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না।