৪–৫ লাখ টাকায় কিডনি কিনে বিক্রি করতেন ৫০ লাখে, ভারত থেকে ফিরে শুরু প্রতারণা

কিডনি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে র‍্যাব
ছবি: সংগৃহীত

চার বছর আগে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন আনিছুর রহমান। বুঝতে পারেন, দেশটিতে কিডনির চাহিদা ব্যাপক। পরে ভারতের কিডনি বেচাকেনা চক্রের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে একটি চক্র গড়ে তোলেন তিনি। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ৪–৫ লাখ টাকায় কিডনি কিনে তা অন্তত ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করত চক্রটি। এভাবে দেশে–বিদেশে ৫০টি কিডনি বিক্রি করেছে তারা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। র‍্যাব জানিয়েছে, কিডনি বেচাকেনায় জড়িত সন্দেহে আনিছুর রহমানসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

আনিছুর ছাড়া আটক বাকি চারজন হলেন সাইফুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন ও এনামুল হোসেন। তাঁদের কাছ থেকে রোগীর সঙ্গে কিডনি বিক্রেতার চুক্তিপত্রের এফিডেভিট কপি, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, হোয়াটসঅ্যাপের স্ক্রিনশট, অঙ্গীকারনামা, কম্পিউটারের হার্ডডিস্কসহ নানা জিনিস জব্দ করা করেছে। আনিছুর এই চক্রের প্রধান।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১–এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মোশতাক আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন আনিছুর। পরে ভারতে কিডনির চাহিদা দেখে দেশটির চক্রের সঙ্গে মিলে ঢাকায় একটি চক্র গড়ে তোলেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালের মাধ্যমে কিডনি কিনতেন তাঁরা।

র‍্যাব কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁরা দেশের বিভিন্ন কিডনি হাসপাতালে গিয়ে কিডনি দরকার এমন বিত্তশালী রোগী খুঁজে বের করতেন। এরপর দরদাম ঠিক হওয়ার পর ভারত, থাইল্যান্ড ও দুবাইসহ রোগীর চাহিদামতো দেশের হাসপাতালে তাঁদের কিডনি প্রতিস্থাপনের ব৵বস্থা করা হতো। দেশ-বিদেশে তাঁরা ৫০টি কিডনি বেচাকেনা করেছেন।

আটক সাইফুল ইসলাম রাজধানীর একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মোশতাক আহমেদ বলেন, কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তিদের পাশের দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট, চিকিৎসার নথিপত্র, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে দিতেন সাইফুল। যাঁদের কাগজপত্র ঠিক থাকে না এবং নথিপত্রে ঘাটতি থাকে, জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁদের কাগজ জোগাড় করে দিতেন তিনি। ২০২১ সালে একই অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ বলেন, আটক আরিফুল ইসলাম ও মো. সালাউদ্দিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য কিডনি বিক্রেতাদের সংগ্রহ করতেন। আটক এনামুল হোসেন একজন কিডনি বিক্রেতা।

মোশতাক আহমেদ বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে নিশানা করত এই চক্র। তারা ৪–৫ লাখ টাকায় কিডনি কিনে অন্তত ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করত। এমন অনেক চক্র আছে। চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে সম্পর্কের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।