গুম হওয়া বিএনপি নেতার ভাইকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, পরে মুক্ত
প্রায় এক যুগ আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম ওরফে সুমনের ভাই সাইফুল ইসলাম ওরফে শ্যামলকে সেনা সদস্যরা আজ সোমবার তুলে নেয় বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। তবে আড়াই ঘণ্টা পর তাঁকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যায় বলেও জানায় পরিবারটি।
সাইফুলের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর শাহীনবাগে তাঁদের বাসা থেকে আজ বেলা আড়াইটার দিকে সেনা সদস্যরা তাঁর ভাই সাইফুলকে তুলে শেরেবাংলা নগর এলাকার সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বিকেল ৫টার তাঁকে আবার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদের একটি অংশ সেনাবাহিনীতেও আছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গুমের শিকার পরিবারগুলোকে নিয়ে গড়ে তোলা সংগঠন মায়ের ডাকের একজন সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম।
সানজিদা ইসলাম বলেন, তাঁর ভাইকে কেন ও কী কারণে তুলে নেওয়া হলো, তা তাঁরা জানতে চান। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনার তদন্ত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহীনবাগে সাইফুল ইসলামদের বাসায় স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় দেখা যায়। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও ওই বাসায় যান। তিনি সাইফুল ইসলামসহ পরিবারের সদস্যদের কথা শোনেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পর অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির একটি তালিকা বের করে বলা হয়, এসবের সঙ্গে তিনি জড়িত এবং তাঁকে ওই কাগজের নিচে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। এ সময় সাইফুল এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানান। পরে সেনা কর্মকর্তারা তাঁকে বলেন, যেকোনো কিছু লিখে তাতে স্বাক্ষর করতে। তখন তিনি একটি সাদা কাগজে তাঁর নাম, তাঁকে তুলে নেওয়ার সময় এবং তিনি নির্দোষ লিখে তাতে স্বাক্ষর করেন। এরপর তাঁকে গাড়িতে তুলে শাহীনবাগের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নিন্দা
সাইফুল ইসলামকে এভাবে তুলে নেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ‘মায়ের ডাক’–এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম এই কমিটির সদস্য। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিমের মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে পুনরাবৃত্তির ঘটনায় আমরা বিস্মিত। সাইফুল ইসলামকে বেআইনি কায়দায় কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই বাসা থেকে কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, সরকারের কাছে তার ব্যাখ্যা চায় নাগরিক কমিটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অগণিত মানুষের জীবনের বিনিময়ে জুলাই–অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। পুরোনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কলকবজা যে এখনো বহাল, এ ঘটনা তারই নজির মাত্র। সাইফুল ইসলামকে তাঁর পরিবার ফিরে পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু এ ধরনের একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার পেছনে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী রেজিমের কোনো চর্চা বর্তমান সময়ে এসে দেখতে চাই না।