মেয়ে হত্যার আসামিরাই এখন শাসাচ্ছে, অভিযোগ পরিবারের

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মেয়ে হত্যার মামলা করে উল্টো বিপদে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে একটি পরিবার। তাঁরা বলছেন, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অনামিকা আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর আসামিরা জামিনে বের হয়ে প্রতিনিয়ত পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় থেমে গেছে হত্যা মামলার তদন্ত। তবে পুলিশ বলছে, আসামিরা ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

মামলার নথিপত্রে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া ব্যাপারীপাড়া এলাকায় অনামিকা আক্তারকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুই দিন পর নিহত নারীর মা অনু খাতুন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অনামিকার স্বামী সাব্বির, জরিপ ওরফে কালা জরিপসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলার বাদী অনু খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ের জামাই সাব্বির দুই লাখ টাকার জন্য অনামিকাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। সাব্বিরের বাসায় জরিপসহ আসামিরা মাদকের আড্ডা বসাতেন। মাদক সেবনের একপর্যায়ে স্বামীর সামনেই জরিপসহ অন্য আসামিরা তাঁর মেয়েকে খারাপ প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়া অনামিকাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁরা জামিনে বের হয়ে এখন পরিবারটিকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। অনু খাতুন বলেন, ‘হত্যা মামলা তুলে নিতে আসামিরা আমার বাড়ির সামনে এসে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আসামিরা প্রভাবশালী। তাই মামলার তদন্তও থেমে আছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামি সাব্বির আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামিনে বেরিয়ে আসার পর অনামিকার পরিবারের কারও সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি।’ আর জরিপ বলেন, ‘আমাকে আসামি করার আগে আমি তাঁদের চিনতাম না। এখনো চিনি না। হুমকি দেব কীভাবে? আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি যদি দোষী হই, তাহলে আমার শাস্তি হবে।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার ২ নম্বর আসামি জরিপের নির্দেশে অনামিকাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জরিপ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার একজন চিহ্নিত অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, দখল, মাদক মামলাসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। এলাকায় এসব অপরাধ পরিচালনার জন্য তাঁর একটি গ্রুপ রয়েছে। জরিপ একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদীকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে বলেছি। আমি অবশ্যই আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তদন্ত থেমে আছে, বাদীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন যোগদান করেছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটা জানতে পারব।’