৭০৫ কোটি টাকা পাচার ৮ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের

সবচেয়ে বেশি ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আনন্দের বাজার। অর্থ আত্মসাৎ করে কেউ কেউ আয়েশি জীবন যাপনও করেছেন।

প্রতীকী ছবি

ই-কমার্সের নামে ৭০৫ কোটি টাকা পাচার করেছে আনন্দের বাজার, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ আটটি প্রতিষ্ঠান। তারা হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অর্থ পাচার আইনে করা মামলার তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বিশাল ছাড়ে মোটরসাইকেল, দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি আর ইলেকট্রনিকস পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকের টাকা নিয়ে কেউ দেশে বসে, আবার কেউ বিদেশে পালিয়ে গিয়ে আয়েশি জীবন যাপন করেছেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, গ্রাহকের টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া ও টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে অর্থ পাচার আইনে করা আটটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে সিআইডি।

সিআইডির তদন্তে আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আমরা এসপিসি ওয়ার্ল্ড নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছি। বাকি সাত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
হুমায়ুন কবির, সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার

এদের মধ্যে আনন্দের বাজার নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ৩০০ কোটি, ই-অরেঞ্জ ২৩২ কোটি, ধামাকা ১১৬ কোটি, রিং আইডি ৩৭ কোটি ৪৯ লাখ, টোয়েন্টি ফোর টিকিট লিমিটেড ৪ কোটি ৪৪ লাখ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড ১ কোটি ১৭ লাখ, সিরাজগঞ্জ শপ ৪ কোটি ৯ লাখ, আকাশনীল ডট কম ৩ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দালাল ডট কম ও থলে ডট কমেরও অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। তবে কত টাকা এই দুই প্রতিষ্ঠান পাচার করেছে, তা এখনো জানা যায়নি।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডির তদন্তে আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এসপিসি ওয়ার্ল্ড নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছি। বাকি সাত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

গ্রাহকেরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ৪২টি মামলা হয়েছে। আর আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানা এবং সাভার, ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জে মোট ২০টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতি স্ত্রী ও ছেলেসন্তান নিয়ে আমেরিকায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন।

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, টাকা দিয়ে পণ্য না পেয়ে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহকেরা। পরে ১৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করে। অনুসন্ধান চলাকালে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০৫টি মামলা রয়েছে। গ্রাহকেরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে।

গ্রাহকেরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ৪২টি মামলা হয়েছে। আর আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানা এবং সাভার, ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জে মোট ২০টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া কিউকমের বিরুদ্ধে ৭টি এবং বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ১ থেকে ৩টি মামলা রয়েছে।

গ্রাহকের প্রতারণার মামলায় গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে তাঁর স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত এপ্রিল মাসে রাসেলের স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন জামিনে মুক্তি পান।

এ ছাড়া প্রতারণা করে গ্রাহকদের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা থেকে ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান এবং সিওও (প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা) আমানুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে দেশ থেকে পালিয়ে যান ই-অরেঞ্জের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি তৎকালীন বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।

এত কিছুর পরেও থেমে নেই ই-কমার্সের প্রতারণা। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গত মার্চ মাসে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এল শফেটিক নামের আরেকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন কামরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী। ওই মামলায় কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও ও মালিক আজিজুল হক সানি ও তাঁর স্ত্রীসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। তবে কোম্পানির গুলশান নিকেতন আবাসিক এলাকার ঠিকানায় গিয়ে অফিস বন্ধ পায় পুলিশ।