প্রায় তিন বছর আগে চুরি হওয়া প্রাইভেট কারটি অবশেষে উদ্ধার

উদ্ধার করা প্রাইভেট কার
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে চুরি হওয়া একটি প্রাইভেট কার অবশেষে সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে হবিগঞ্জের আসেরা গ্রামের স্কুল বাড়ি এলাকা থেকে প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চল। সহায়তা করে হবিগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ।

৮ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘বিআরটিএ ও পুলিশের গাফিলতি: চুরির গাড়ি নিলামে, চলছে হবিগঞ্জে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ গাড়িটি উদ্ধার হলো।

সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মোহাম্মদ শরীফ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও গাড়িটি উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত গাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো। এখন গাড়িটি হবিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের একটি পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে গাড়িটি (টয়োটা ডিএক্স প্রভোক্স) চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাড়ির চালক জানে আলম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন।

মামলার কোনো কিনারা করতে না পেরে থানা-পুলিশ ১০ মাস পর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর আদালত থানা-পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদালতের আদেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক শরীফ চৌধুরী। তদন্তের একপর্যায়ে গত বছরের জুলাইয়ে সিআইডি জানতে পারে, গাড়িটি হবিগঞ্জের শিশু মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে আছে। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সিআইডি। শিশু মিয়া বলেন, ২০২১ সালের ১৬ মার্চ হবিগঞ্জ আদালতে নিলামের মাধ্যমে গাড়িটি কিনেছেন তিনি।

সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার গোপলার বাজার গজনাইপুর ইউনিয়ন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গাড়ির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি পাঠায় গোপলার বাজার পুলিশ ফাঁড়ি।

চিঠিতে উদ্ধার হওয়া প্রাইভেট কারের ইঞ্জিন, চেচিস ও গাড়ির নম্বর (চট্ট মেট্রো গ-১১-৮৬৫৩) দেওয়া হয়। কিন্তু বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো-১ সার্কেল মোটরযান পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন চট্ট মেট্রো-ল সিরিয়ালের একটি মোটরসাইকেল মালিক চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আবদুল করিমের ঠিকানা দেন। এতে প্রাইভেট কারটির মালিক করিমকে দেখানো হয়।

পরে বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন আনোয়ার। ভুল সংশোধন করে নবীগঞ্জ থানায় চিঠি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুন

কিন্তু নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ পরবর্তী সময়ে তা আর যাচাই-বাছাই করেনি। মালিক না পাওয়ায় প্রাইভেট কারটি নিলামের জন্য হবিগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে নিলামের মাধ্যমে প্রাইভেট কারটি বিক্রি করা হয়।

সিআইডি প্রাইভেট কারটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিলাম কিনে নেওয়া শিশু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তিনি গাড়ি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

আদালত সূত্র জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শরীফ চৌধুরী প্রাইভেট কারটি চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে আবেদন করেন। আদালত গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যেকোনো উপায়ে গাড়িটি জব্দ করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

আজ গাড়িটি উদ্ধার করল সিআইডি। মামলার বাদী জানে আলম আজ বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রতিবেদন আসার পর গাড়িটি উদ্ধার হলো। গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় আমি অনেক খুশি।’