আদালত চত্বর থেকে ছিনতাই দুই জঙ্গির একজন ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’: সিটিটিসি

এক বছর আগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বর থেকে ছিনতাই করে নেওয়া আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গির একজন ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’ হয়ে গেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) বলছে, সম্প্রতি ঢাকার একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের মাত্র দুই দিন আগে বাসাটি থেকে চলে যান আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির একজন। প্রায় এক মাস ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন তিনি।

আজ রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে পুলিশের চোখেমুখে স্প্রে ছিটিয়ে আনসার আল ইসলামের সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নেন তাঁর সহযোগীরা। এর পর থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিগোষ্ঠীটির অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ছিনতাই করে নেওয়া ওই দুই জঙ্গি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তারা জানতে পারে, মাত্র দুই দিন আগে সেখান থেকে চলে গেছেন আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির একজন। তিনি প্রায় এক মাস ওই বাসায় ছিলেন। ওই অভিযানের ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক (৪৫), সংগঠনের আশকারি বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ইহসানুর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ (২৬), বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল (৩০), ইউসুফ আলী সরকার (৩১) ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ (৩৫)।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল ইসলামই কিছুটা সক্রিয়। সংগঠনটি ঘিরে সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা মনে করি সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্ব পর্যায়ের পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমরা তা অনেকটা নিউট্রাল করতে পেরেছি।’

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুকি–চিনের সহায়তায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজকে আগে আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি জেলখানায় বসে যখন নতুন সংগঠনের পরিকল্পনা করেন, তখন সমমনা আরও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। মতাদর্শ ও পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁরা একত্রিত হয়ে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করেন। এ জন্যই পরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শামিন মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামানসহ অন্য ব্যক্তিরা
ছবি: সংগৃহীত

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘শারক্বীয়ার ৯৫ শতাংশের বেশি সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে শারক্বীয়ার যবনিকা টানতে পেরেছি।’

কুকি–চিন ও তাঁদের নেতৃত্ব পর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আনসার আল ইসলামের বাইরে এখন কোনো সংগঠনের তৎপরতা আছে বলে মনে হয় না। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামের একটি সংগঠন শারক্বীয়ার মতো পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার আগেই তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। আমরা এমন সংগঠন অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি।’

নির্বাচন সামনে রেখে আনসার আল ইসলামের পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে এটা ঠিক, জঙ্গি সংগঠনগুলো এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চায়। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেয়, তখন তারা সদস্য সংগ্রহসহ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আগের মতো পরিস্থিতি নেই, আগে সিটিটিসির মতো ইউনিট ছিল না, যারা শুধু জঙ্গিদের নিয়েই কাজ করবে।’

আরও পড়ুন

সিটিটিসি জানায়, আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তার সদস্যদের মধ্যে সাখাওয়াতুল কবির ২০০২ সালে আনসার আল ইসলামের মাতৃসংগঠন জামিয়াতুল মুসলিমিনে যোগদানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। আনসার আল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা এজাজ কারগিলের হাত ধরে তিনি সংগঠনে যোগ দেন। এর পর থেকে আমির এজাজ কারগিলের সঙ্গেই থাকতেন। এজাজ কারগিল পাকিস্তানে ড্রোন হামলায় মারা যান।

২০১৫ সালে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সাখাওয়াতুল কবিরকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সংগঠনে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে সংগঠনের সূরা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

সিটিটিসি জানায়, ইহসানুর রহমান সংগঠনের আশকারি বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার। ২০২০ সালে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইলে মাস্টার্স করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে সংগঠনে সক্রিয় হন তিনি। ২০২২ সালে তাঁকে এ অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাইফ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আত্মগোপনে থেকে আশকারি শাখার অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ, নতুন সদস্য রিক্রুটের কাজ তাঁর নেতৃত্বে হতো।

বখতিয়ার রহমান সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। কিছুদিন আগে সিটিটিসি একজনকে রোগী সাজিয়ে তাঁর বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান। গতকালের অভিযানে অন্যদের গ্রেপ্তারের সময় বখতিয়ারকেও পাওয়া গেছে।

জাহেদুল জয়দেবপুর অঞ্চলের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান। ঢাকার আশপাশে আনসার ইসলামের বেশ কয়েকটি সেল রয়েছে। এর মধ্যে সাভার অঞ্চলের একটি সেলের দায়িত্ব ছিল তাঁর। ২০১৫ সালে ঢাকা কলেজে স্নাতক পড়ার সময় সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন