আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল হত্যায় পলাতক আট আসামির নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু
ফাইল ছবি

ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আট আসামির নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

পলাতক আসামিরা হলেন জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮), রিফতি হোসেন (৩৮), সোহেল ওরফে রানা মোল্লা (৪৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), সামসুল হায়দার (৪১) ও কামরুজ্জামান (৬২)।

তাঁদের মধ্যে জিসান ও মানিক পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁরা বিদেশে পালিয়ে থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ। মামলার অপর আসামি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর গতকাল বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

এর আগে গত ২০ জুন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর মধ্যে বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এক বছরের বেশি সময় পর গত ৫ জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলায় ২ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মারুফ রেজা সাগর (৪০), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯) ও ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২)। আর জামিনে আছেন তিন আসামি। তাঁরা হলেন হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), মোরশেদুল আলম পলাশ (৫১) ও রাকিবুর রহমান (৩১)।

আরও পড়ুন

মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য ও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য—এ দুই কারণে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরিকল্পনায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ, জাফর আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৩০ জনের নাম এসেছে। আর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তিনজন। সুমন শিকদার ওরফে মুসা পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন।

ডিবি বলছে, দীর্ঘ ১৪ মাস তদন্তের পর গুলি করে হত্যার ঘটনায় কজন অংশ নিয়েছিলেন, পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, হত্যাকাণ্ডে কার কী ভূমিকা ছিল—সেসব তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল।

মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র নিয়ে জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগপত্রে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান ফারহানা।