গুমের শিকার হওয়ার পর যাঁরা ফেরত আসতে পেরেছেন, তাঁরা নিজেদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা এখন তা-ও বলতে পারছেন। এই ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কীভাবে দিন পার করেছে, সেই কষ্টের কথা কিছুটা জানা যাচ্ছে। কিন্তু গুমের শিকার যেসব ব্যক্তি এখনো ফেরেননি, তাঁদের পরিবার কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে কথা কেউ জানার চেষ্টাও করে না।
‘হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি: আয়নাঘর প্রকল্প’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজক ছিল ‘ছত্রিশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের শিকার হয়ে সম্প্রতি ফেরত আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) তাঁদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা সেমিনারে তুলে ধরেন। দীর্ঘ আট বছর পর তাঁরা গোপন বন্দিশালায় (আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত) ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর তাঁরা মুক্ত হন।
আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ৫ আগস্ট সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে না থাকলে রক্তের বন্যা বয়ে যেত। ব্যক্তির অপরাধের শাস্তি হতে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার বিষয়টি একটি ভারতীয় এজেন্ডা। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, এর পেছনে ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই (আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে) জনগণের সিদ্ধান্তের কথা বলছেন। জনগণ তো জুলাই-আগস্টে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, সংস্কার এবং বিচারের (আওয়ামী লীগের) আগে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। নির্বাচন ২০২৭ সালের আগে না হলেই ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আট বছর গুম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আইনজীবী মীর আহমদ বিন কাসেম বলেন, তাঁকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেখানে বুঝতে পারতেন না বাইরে দিন নাকি রাত। অন্ধকার ঘরের ভেতরেও চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে রাখা হতো। তিনি বলেন, ‘আমি তো আজ কথা বলতে পারছি, এমন হাজারো পরিবার আছে, যাদের এ বিষয়ে কথা বলার বা বিষয়টি জানানোর কেউ নেই।’
সেমিনারে আইনজীবী নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সচেতন না হলে ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে। আবার কেউ চেতনা ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ধরে নিতে হবে, তারা ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফ্যাসিবাদ রুখতে হলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।
গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সরকারি চাকরিতে বড় পদবি পেতেন বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার পিএইচডি গবেষক খন্দকার রাকিব।
এই সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ‘ছত্রিশ’ প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ।