দুজনই গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করেন। একজনের দরকার চালকের সহকারীর কার্ড আর অন্যজনের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। এ জন্য দুজনের টাকার প্রয়োজন। পরিকল্পনা করেন, যাত্রীবেশে অটোরিকশায় চড়ে চালককে হত্যা করে তা ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেবেন। তাঁদের নজর পড়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক চালকের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রীবেশে অটোরিকশায় চড়ে তা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন দুজন। এতে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে চালক মো. হাছানকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন তাঁরা। পরে রাস্তার পাশে ডোবায় মরদেহটি ফেলে দেন।
সূত্রবিহীন এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এসব তথ্য জানায়। গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. আলাউদ্দিন (২৮) ও শাকিল আহমেদ (১৯)। আগের দিন রাতে নগরের লালদীঘির পাড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গত বুধবার নগরের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা ইউনিয়নের আদর্শবাজার এলাকায় একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় গলায় কাপড়ের বেল্ট বাঁধা ছিল মরদেহের গলায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। সূত্রবিহীন মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা রোববার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তার দুজন অটোরিকশাচালক হাছানকে শ্বাস রোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অটোরিকশাটি কর্ণফুলীর ফকিরহাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা দেখে জড়িত আসামিদের শনাক্ত ও নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়।
নাইমা সুলতানা বলেন, গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনের বাসের চালকের সহকারী হতে একটি কার্ড তৈরি করতে হবে। এ জন্য তাঁর ৭ হাজার ৫০০ টাকা দরকার। আরেক আসামি শাকিলের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা দরকার। দুজন নগরের লালদীঘি এলাকায় গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করেন।
নাইমা সুলতানা আরও বলেন, দুজন মিলে পরিকল্পনা করেন, যাত্রী সেজে অটোরিকশাচালককে নিয়ে গিয়ে গাড়িটি কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দেবেন। পরে ওই টাকা তাঁরা ভাগাভাগি করে নেবেন। পরিকল্পনামতো মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরের লালদীঘির পাড় থেকে কর্ণফুলীর শিকলবাহা যাওয়ার কথা বলে ৩০০ টাকায় হাছানের অটোরিকশাটি ভাড়া নেন দুজন।
কর্ণফুলী আদর্শবাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর চালকের কাছ থেকে অটোরিকশাটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তখন চালক হাছান তাঁদের বাধা দেন। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা একটি কাঠের টুকরা দিয়ে চালকের মাথায় আঘাত করেন তাঁরা। পরে একটি কাপড়ের বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যা করে পাশের ডোবায় মরদেহ ফেলে দেন।
এলাকাটি নির্জন ও রাত প্রায় দেড়টা হওয়ায় আশপাশের লোকজন ঘটনাটি বুঝে উঠতে পারেননি। চালককে ডোবায় ফেলে অটোরিকশাটি একজনের কাছ বিক্রি করতে চাইলেও না পেরে তাঁরা গাড়িটি রেখে চলে আসেন।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেপ্তার দুজন রোববার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।