দিনে হিজড়া রাতে নারীর সাজ, ফাঁদে ফেলে অপহরণ–মুক্তিপণ আদায়

অপহরণ
প্রতীকী ছবি

আছে স্ত্রী, আছে সন্তানও; অথচ তাঁরা হিজড়া সেজে ঘুরে বেড়ান। আবার রাতে নারী সেজে লোকজনকে ফাঁদে ফেলে যা কিছু পান, কেড়ে নেন। কখনোবা ফাঁদে পড়া ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণও আদায় করেন।

অভিনব পন্থায় প্রতারণার এমন অভিযোগে একটি চক্রের প্রধানসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতি মাসে সোহাগের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫টি অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব টাকা তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্নবিত্ত মানুষকে উচ্চ সুদে ঋণ দেন। ১০ হাজার টাকা ঋণ নিলে সপ্তাহে এক হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। যাঁরা টাকা দিতে ব্যর্থ হতেন, তাঁদেরও তিনি ছিনতাই ও অপহরণের কাজে যুক্ত হতে বাধ্য করতেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের প্রধান মো. সোহাগ, তাঁর সহযোগী মো. নাছির, আমানুর মণ্ডল, মো. রাজু, আবদুর রহমান ও হৃদয় মিয়া।

ডিবির ওয়ারী বিভাগের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সোহাগ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। মূলত প্রতারণা করতেই তিনি হিজড়াদের চালচলন রপ্ত করেন। এ কাজে তিনি এতটাই সিদ্ধহস্ত হন যে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও তাঁকে নিয়ে কোনো সন্দেহ  করতেন না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি ছিনতাই ও অপহরণের একটি চক্র গড়ে তোলেন। হিজড়া জনগোষ্ঠীতে তিনি কাজল, স্বজন, সজনী নামেও পরিচিত। সোহাগের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।

ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসে সোহাগের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫টি অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব টাকা তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্নবিত্ত মানুষকে উচ্চসুদে ঋণ দেন। ১০ হাজার টাকা ঋণ নিলে সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। যাঁরা টাকা দিতে ব্যর্থ হতেন, তাঁদেরও তিনি ছিনতাই ও অপহরণের কাজে যুক্ত হতে বাধ্য করতেন।

ডিবি জানায়, সোহাগের নেতৃত্বাধীন চক্রটি মূলত যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও অপহরণ করে থাকে। একেক দিন একেক এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে অপরাধ করতে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা বেছে নিত তারা।

নারী সেজে অপহরণ

ডিবি জানায়, একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সোহাগ ও তাঁর পাঁচজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপহরণের ঘটনাটি ঘটে গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে। অপহরণের শিকার ব্যক্তি ঢাকার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার একটি গলিতে সোহাগ প্রথমে নারী সেজে তাঁকে ফাঁদে ফেলেন। তখন সোহাগের সঙ্গে ছিলেন আরও সাত–আটজন।

এরপর ওই শিক্ষার্থীকে যাত্রাবাড়ীর একটি মেসে নিয়ে সঙ্গে থাকা ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন সোহাগ। বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে আদায় করেন আরও ২৪ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাই।

সোহাগের প্রতারণা প্রসঙ্গে ডিবির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তরিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৬ বছর ধরে সোহাগের নেতৃত্বে অনেক মানুষকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। যাঁরা এই চক্রের ফাঁদে পড়েন, তাঁরা লোকলজ্জায় ঘটনা গোপন রাখেন। মানুষের এমন দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাই ও অপহরণে যুক্ত হয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন চক্রের সদস্যরা।