১৫ মাসেও উদ্ধার হয়নি ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সোয়া ৩ কোটি টাকা, কী বলছে ডিবি
রাজধানীর উত্তরায় ১৫ মাস আগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা গাড়িতে বহন করার সময় ডাকাতি হয়েছিল। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির এ ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ৮ কোটি টাকার বেশি উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশ এত দিনেও বাকি ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।
গত বছরের ৯ মার্চ উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ–সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে। মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড নামের একটি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে করে ওই টাকা বহন করা হচ্ছিল। বুথে টাকা লোড করতে ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড যাচ্ছিল গাড়িটি। পথে একদল ডাকাত একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা বহনকারী গাড়িটি থামায়। এরপর মাইক্রোবাস থেকে ১০-১২ জন সশস্ত্র ব্যক্তি নেমে গাড়ির দরজা খুলে ফেলেন। তাঁদের একজন নিজেকে ডিবি পরিচয় দেন।
ডাকাতেরা মানি প্ল্যান্টের কর্মীদের চড়থাপ্পড় ও ঘুষি মেরে টাকাভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনিয়ে পালিয়ে যান। ট্রাংকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিল। টাকা বহনের সময় নিয়ম অনুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় হওয়া ডাকাতির মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডাকাতির ঘটনাটি তখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এতে ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্দেহভাজন সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৩ জনকে। ওই ঘটনায় উদ্ধার করা হয় ৮ কোটি ১০ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা। এখনো তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং উদ্ধার করা যায়নি ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন ডাকাত গ্রেপ্তার ও বাকি টাকা উদ্ধার না হওয়ায় মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।
ডাকাতির বেশির ভাগ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে বাকি টাকা উদ্ধারের পর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হৃদয়, সাগর মাদবর, ইমন ওরফে মিলন, সানোয়ার হাসান, বদরুল আলম, আকাশ মাদবর, এনামুল হক বাদশা, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া, মিলন, সোহেল, হাবিব ও বাবলু।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের সাবেক গাড়িচালক সোহেল। তাঁর সঙ্গে টাকা লুটের পরিকল্পনায় ছিলেন আকাশ ও সানোয়ার। অন্য ব্যক্তিরা সরাসরি ছিনতাইয়ে অংশ নেন। ছিনতাইয়ের কবলে পড়া গাড়ির নকল চাবি ছিল ডাকাতদের কাছে। সেটির মাধ্যমে গাড়ির দরজা খোলেন ডাকাতেরা।
পরিকল্পনা কার্যকর করা হয় যেভাবে
ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে কয়েক স্তরে বিভিন্নজনের সম্পৃক্ততা ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ মুঠোফোন ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ জনবল সংগ্রহকারী। টাকা লুটের পরিকল্পনা নিয়ে ইমন ওরফে মিলনের সঙ্গে আলোচনা করেন আকাশ। তিনি মিলনকে বলেন, হুন্ডির টাকা ধরতে হবে। এ জন্য কিছু লোক প্রয়োজন। পরে মিলন তাঁর পূর্বপরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি জানান। সোহেলকে জনবল ও সিম সংগ্রহ এবং মুঠোফোন কেনার দায়িত্ব দেন তিনি। সানোয়ার আটটি নতুন সিম ও মুঠোফোন জোগাড় করেন। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ (নিজ জেলা) ও নেত্রকোনা থেকে নয়জনকে সংগ্রহ করেন। তাঁরা প্রত্যেকে ঘটনার দুই দিন আগে ঢাকায় একত্র হন।
টাকা বহনের সময় নিয়ম অনুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় হওয়া ডাকাতির মামলাটি তদন্ত করছে ডিএমপির মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগ।
পরিকল্পনাকারীরা এই ব্যক্তিদের নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেন। আকাশ ও সোহেল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখেন মিলন ও সানোয়ারের কাছে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্র হন। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিতে ওঠার পর মিলন ও সানোয়ার বুঝতে পারেন, বড় কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এরপর পরিকল্পনামাফিক টাকা লুট করা হয়।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকাতির বেশির ভাগ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে বাকি টাকা উদ্ধারের পর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে মানি প্ল্যান্ট লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটির মধ্যে ৮ কোটি টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘টাকা ছিল ব্যাংকের। আমরা শুধু বাহক হিসেবে সেটি বুথে নিয়ে যাচ্ছিলাম। টাকা বহনের চুক্তি অনুযায়ী প্রায় পুরো টাকা ডাচ্–বাংলা ব্যাংক আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে ডিবি থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ এখন বাকি টাকা উদ্ধার করার দাবি জানান তিনি।