আড়াই কোটি টাকার উৎস কী, ছয় মাসেও তদন্ত শেষ করতে পারল না পুলিশ

রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে গত বছরের ১ আগস্ট ওনাইসী সাঈদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব
ছবি: সংগৃহীত (ফাইল ছবি)

ঢাকায় গ্রিনহাউসে অপ্রচলিত মাদক ‘কুশ’ উৎপাদনের অপরাধে ওনাইসী সাঈদকে ছয় মাসের বেশি সময় আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত মাসে তিনি জামিনে মুক্তিও পেয়েছেন। কিন্তু ওই মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি পুলিশ। ওনাইসীর বাসা থেকে উদ্ধার প্রায় আড়াই কোটি টাকা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রার উৎস সম্পর্কেও পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।

গত বছরের ১ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে ওনাইসীকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। পরে তাঁকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে তাঁর ভাড়া ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, দশমিক শূন্য ৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানিল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩টি এক্সট্যাসি, ২৮টি এডারল ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। পাওয়া যায় কুশ চাষের (উন্নত জাতের মারিজুয়ানা) সন্ধান। পাশাপাশি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন
কোনো মামলার তদন্তে যদি মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য উঠে আসে, তখন ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা সিআইডিকে সেটি চিঠি দিয়ে জানায়। মাদক মামলার আসামি ওনাইসী সাঈদের বিষয়ে তদন্ত করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ জানানো হয়নি।
আজাদ রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিআইডি।
ওনাইসীর বাসা থেকে জব্দ করা মাদক ও মাদকের সরঞ্জাম
ছবি: সংগৃহীত (ফাইল ছবি)

ওই সময় সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানিয়েছিল, ওনাইসীর বাসা থেকে উদ্ধার এসব মাদক বাংলাদেশে অপ্রচলিত। মারিজুয়ানা শ্রেণির উদ্ভিদের সবচেয়ে উন্নত জাত কুশ। হেম্পও মারিজুয়ানা থেকে তৈরি মাদক। এক্সট্যাসি, মলি ও এডারলের মূল উপাদান অ্যামফিটামিন, যা ইয়াবা তৈরিরও মূল উপাদান। তবে নতুন এসব মাদকের প্রভাব ইয়াবার চেয়ে বেশি। ফেন্টানিলের মূল উপাদান আফিম।

অভিযানে ওনাইসীর কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশি-বিদেশি মুদ্রা মূলত মাদক বিক্রির অর্থ—এমনটাই জানায় র‍্যাব। এ কারণে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানানো হয়। তবে এখনো এই বিষয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করেনি। মামলার তদন্ত সংস্থা গুলশান থানাও বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে কোনো চিঠি দেয়নি।

এই বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মামলার তদন্তে যদি মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য উঠে আসে, তখন ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা সিআইডিকে সেটি চিঠি দিয়ে জানায়। মাদক মামলার আসামি ওনাইসী সাঈদের বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ–সংক্রান্ত কোনো চিঠি তারা পায়নি।

আরও পড়ুন

ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে চিঠি না দেওয়ার বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক মামুন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওনাইসীর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার মাদকের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারণে মামলার তদন্ত শেষ হলেও অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে তা সিআইডিকে চিঠি লিখে জানানো হবে।

মামুন মিয়া বলেন, গত মাসের শেষের দিকে ওনাইসী জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে ওনাইসীর সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তাঁর অর্থের উৎস সম্পর্কেও কিছু জানাতে চাননি মামুন মিয়া।

ওনাইসী সাঈদ পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় যান। বিবিএ ও এমবিএ করে ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন। ২০১৮ সাল থেকে অপ্রচলিত মাদক দেশে আনা শুরু করেন তিনি।

ওনাইসীর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার মাদকের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারণে মামলার তদন্ত শেষ হলেও অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে তা সিআইডিকে চিঠি লিখে জানানো হবে।
মামুন মিয়া, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার উপপরিদর্শক।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এসব মাদক কখনো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে, আবার কখনো নিজেই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এনেছেন ওনাইসী। কানাডা থেকে কুরিয়ারে ফয়সাল নামের প্রবাসী এক বাংলাদেশি তাঁর কাছে মাদকের চালান পাঠাতেন। দেশের বাইরে থেকে তাঁর কাছে বিভিন্ন সময় ২০টির মতো মাদকের চালান এসেছে।

শুধু বিদেশ থেকে আনা নয়, এক সময় নিজেও মাদক উৎপাদনে ঝোঁকেন ওনাইসী। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে ছোট পরিসরে গ্রিনহাউস তৈরি করেন। সেখানে তিনি কুশের আবাদ শুরু করেন। বীজ আনেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। শুরুতে চার ভাগে ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় কুশ উৎপাদন করেন তিনি।

পরীক্ষামূলক পর্যায়ে উৎপাদিত ৩০০ গ্রাম কুশ (প্রতি ১০০ গ্রাম তিন লাখ টাকা করে) বিক্রিও করেন ওনাইসী। বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে এসব মাদক সরবরাহ করতেন তিনি। উচ্চবিত্ত পরিবারের মাদকসেবী সন্তানেরা মূলত তাঁর গ্রাহক ছিল।