ফাঁদ পেতে এলসি খুলে হাজারো কোটি টাকা পাচার, নিরীহরা এখন হয়রান

দিদারুল আলম ‍ও শহীদুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

জমিজমা বিক্রিতে মধ্যস্থতা করতেন আবদুল মোতালেব হোসেন। একটি আবাসন নির্মাণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিদারুল আলমের কয়েকটি জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন তিনি। এই সূত্রে দিদারুলের কাছে একটি চাকরি চান মোতালেব। চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি নেন দিদারুল। পরে তিনি বড় ভাই শহীদুল আলমকে দিয়ে আরেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ওপর মোতালেবের ছবি বসিয়ে, স্বাক্ষর নিয়ে একাধিক ব্যাংকে এলসি (বিলপত্র) খোলেন। কিছুদিন পর মোতালেব জানতে পারেন, তিনি অর্থ পাচার আইনের ১৭টি মামলার আসামি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, মোতালেবের নামে রাজধানীর কয়েকটি ব্যাংকে এলসি খোলে প্রতারক চক্রটি। তারা পোলট্রি ফিডের মূলধনী যন্ত্রপাতির মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অস্তিত্বহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করে। চীন থেকে থেকে আনা এসব পণ্যের মধ্যে ছিল গুঁড়া দুধ, মদ, সিগারেট ও এলইডি টেলিভিশন। এসব ঘটনায় মোতালেবের নামে অর্থ পাচার আইনে মামলাগুলো হয়।

শুধু মোতালেবই নন, তাঁর মতো আরও তিন ব্যক্তিকে একই ফাঁদে ফেলেন দিদারুল-শহীদুলরা। অপর ভুক্তভোগীরা হলেন আবদুল বারিক মিয়া, মো. কবির হোসেন ও বিল্লাল হোসেন খান। তাঁরা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মামলায় ফেঁসেছেন।

অন্যদিকে, দিদারুলরা গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। তাঁদের প্রতারণা ও অর্থ পাচারের বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধান উঠে এসেছে। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন আইনে ৩০টি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী অধিদপ্তর।

তবে মোতালেবরা মামলা থেকে রেহাই পাননি। তাঁরা মামলা থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে যুক্ত আছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাকিল খন্দকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দিদারুলরা চার নিরীহ ব্যক্তিকে যে ফাঁসিয়েছেন, তা তাঁদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

চাকরি চেয়ে ফাঁদে
মোতালেবের বাড়ি রাজধানীর খিলক্ষেত থানার পাতিরায়। তিনি কীভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তার বিবরণ সম্প্রতি প্রথম আলোর কাছে দিয়েছেন। মোতালেব বলেন, তিনি জমির বেচাকেনায় মধ্যস্থতা করতেন। দিদারুলকে বিভিন্ন সময় কয়েকটি জমি কেনায় সহায়তা করেছিলেন। এ সুবাদে তিনি বিজয়নগরে দিদারুলের মিরর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অফিসে যেতেন। দিদারুলের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালের একদিন তিনি দিদারুলকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। তাদের বিয়ের সময় কেউ তাঁকে ‘দালাল’ বলুক, তা তিনি চান না। তাই তিনি দিদারুলের কাছে একটি চাকরি চান।

মোতালেব বলেন, তখন দিদারুল তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট চেয়ে নেন। বলেন, তিনি কেরানীগঞ্জের চরগলগলিয়ায় একটি গোখাদ্যের কারখানা করবেন। সেখানে তাঁকে ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) পদে চাকরি দেবেন।

মোতালেব বলেন, চাকরির জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে বলে তাঁকে জানান দিদারুল। পরে তিনি দিদারুলের বড় ভাই শহীদুলের সঙ্গে তাঁকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় পাঠান। ব্যাংক হিসাব খুলতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন শহীদুল। জনৈক খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ওপর মোতালেবের ছবি বসান। খোরশেদের নামে স্বাক্ষর করান মোতালেবকে দিয়ে। ফলে ব্যাংকের কাগজপত্রে মোতালেব হয়ে যান খোরশেদ। এই খোরশেদ হলেন দিদারুলের অফিসের আগের কর্মচারী।

মোতালেবের ভাষ্য, ব্যাংকে চলতি হিসাবের বিপরীতে তাঁর নামে এলসি খুলে বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি করতেন দিদারুল। কী মালামাল আনতেন দিদারুল, তা জানতেন না মোতালেব। বিদেশ থেকে আনা মালামাল দেখতে চাইলে দিদারুল বলতেন, কেরানীগঞ্জের কারখানায় আছে। বিদেশ থেকে প্রকৌশলী আসার পর কারখানা চালু করা হবে, তখন মালামাল দেখানো হবে। একপর্যায়ে মোতালেবকে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে ডাকা হয়। অর্থ পাচার আইনে তাঁর বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার কথা তাঁকে জানানো হয়।

মোতালেব বলেন, মামলার কথা শুনে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়। তিনি দিদারুলদের প্রতারণা-জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। একপর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। কয়েক মাস পর জামিনে বেরিয়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। এখন তিনি মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এসবে টাকাপয়সা খুইয়ে তিনি এখন প্রায় নিঃস্ব।

মোতালেব বলেন, দিদারুলের জমি কেনার ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা তাঁর হাত দিয়েই লেনদেন হয়েছে। কিন্তু তিনি যে এত বড় প্রতারক, তা কল্পনাও করতে পারেননি। দিদারুল তাঁকে হেনান আনহুই কোম্পানির মালিক বানিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় ৭টি এলসি খোলেন। একইভাবে মেসার্স অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপির মালিক বানিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে আরও ১০টি এলসি খোলেন। এখন তিনি শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এসব জানতে পেরেছেন।

‘উপকার’ করতে গিয়ে ফেঁসেছেন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার নন্দলালপুরের বাসিন্দা বিল্লাল। তিনি শহীদুলের পূর্বপরিচিত ছিলেন। বিল্লাল প্রথম আলোকে বলেন, একদিন শহীদুল তাঁকে ব্যাংকে নিয়ে যান। বলেন, এত দিনের পুরোনো সম্পর্ক, তিনি যেন একটি এলসি খুলে তাঁর উপকার করেন। পরে শহীদুল নিজের নামে স্থানান্তর করে নেবেন।

বিল্লাল বলেন, তাঁকে ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সুরুজ মিয়া বলে পরিচয় করিয়ে দেন শহীদুল। বিল্লাল তখন বলেন, তিনি তো সুরুজ নন। প্রথমে তিনি এলসি ফরমে স্বাক্ষর করতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে শহীদুলের চাপাচাপিতে তিনি সুরুজ নামে এলসি খোলেন। এভাবে তিনি হয়ে যান সুরুজ। পরে তাঁর অজান্তে একের পর এক অবৈধ পণ্যের চালান আসতে থাকে। আর তিনি হয়ে যান অর্থ পাচার আইনের ১৪ মামলার আসামি।

ভালো চাকরির প্রলোভন

বাগেরহাটের মোংলার বাসিন্দা বারিক। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে চলার আশা ছিল তাঁর। ২০১৬ সালে ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই ব্যবসায়ী তাঁকে দিদারুলের প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরির প্রস্তাব দেন।

বারিক বলেন, দিদারুলের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গেলে তাঁকে এন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বানিয়ে একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি ও গুলশান শাখায় এলসি খোলানো হয়। পরে তিনি হয়ে যান অর্থ পাচার আইনে করা একাধিক মামলার আসামি।

টাকার অভাবে বারিক একপর্যায়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় মাঝেমধ্যে তিনি আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। বারিক বলেন, ‘প্রতারকের খপ্পরে পড়ে এখন আমি কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি।’

টাকা জমা দিতে গিয়ে ফাঁদে

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কবির মাধ্যমিক পাসের পর ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় কম্পিউটার টাইপিং শেখার সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে দিদারুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে দিদারুলের মিরর ডেভেলপমেন্টে তাঁর চাকরি হয়।

কবির বলেন, দিদারুলের নির্দেশে তিনি মাঝেমধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। টাকা জমা দিতে গিয়ে কীভাবে যেন তিনি হয়ে যান আট কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। পরে জামিন পান। বিভিন্ন সংস্থা ও আদালতে দৌড়াদৌড়ি করে তিনি হয়রান। টাকাপয়সা যা ছিল, তা–ও শেষ।

আঙুল ফুলে কলাগাছ

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, শহীদুল ও দিদারুলের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীপুরে। তাঁরা একসময় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছিলেন। দিদারুল ২০০৮ সালে রাজধানীর বিজয়নগরে মিরর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে দুই ভাই নানান অপকর্ম করে আসছিলেন। তাঁরা গরিব-অসহায় মানুষকে ফাঁদে ফেলে এলসি খুলতেন। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির নামে রাজস্ব ফাঁকি ও বিদেশে অর্থ পাচার করতেন। তাঁরা এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হন।

সম্প্রতি বিজয়নগরের মাহতাব সেন্টারে মিরর ডেভেলপমেন্টের অফিসে গিয়ে সেটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। পরে ভবনের ব্যবস্থাপক সরদার মো. মোস্তাইম বিল্লাহর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই অফিস বন্ধ আছে। অন্য কোথাও অফিস আছে কি না জানি না।’

১৩৯৬ কোটি টাকা পাচার

শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, শহীদুল ও দিদারুল তাঁদের কর্মচারীসহ নিরীহ ব্যক্তিদের দিয়ে মেসার্স অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি, হেনান আনহুই অ্যাগ্রো, হেব্রা ব্র্যাঙ্কো ও চায়না বিডিএল নামের চারটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খুলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আনছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠান ২৯টি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। এর মধ্যে হেনান আনহুই অ্যাগ্রো ৪৩৯ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি ৪৩২ কোটি টাকা, হেব্রা ব্র্যাঙ্কো ২৯১ কোটি টাকা ও চায়না বিডিএল ২৩৪ কোটি টাকা পাচার করেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাকিল খন্দকার বলেন, অর্থ পাচারের ঘটনায় তাঁরা দিদারুলের মিরর ডেভেলপমেন্টের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রমাণ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথি জব্দ করেছেন। দিদারুলরা যে চার নিরীহ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়েছেন, তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এখন তাঁরা যাতে মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন, সেটি তাঁদের বিবেচনায় থাকবে।

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৩০ মামলা

দিদারুল ও শহীদুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি করে মোট ৩০টি মামলা করেছে অধিদপ্তর।

২৯টি মামলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। আর অর্থ পাচার আইনে হওয়া আরেকটি মামলা সিআইডি, দুদক ও শুল্ক গোয়েন্দারা যৌথ তদন্ত করছে।

শহীদুল সপরিবার ইতালি পালিয়ে যাওয়ার সময় গত ১৪ আগস্ট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি বর্তমানে কারাগারে।

শহীদুল গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন দিদারুল। শুল্ক গোয়েন্দারা তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বরে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী শহীদুলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দিদারুল এক কারারক্ষীকে মারধর করে আটক হন। পরে অবশ্য দিদারুল জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।

জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাস

শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এ পর্যন্ত মেসার্স অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি ও হেনান আনহুই কোম্পানির নামে ৯০ কনটেইনার পণ্য দেশে আনা হয়, যার মধ্যে ১২টি কনটেইনার ধরা পড়ে। বাকি ৭৮ কনটেইনার জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস করে নেয় চক্রটি।

একই সঙ্গে হেব্রা ব্রাঙ্কো, চায়না বিডিএল—এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে দেশে আসে আরও ৫৬ কনটেইনার পণ্য, যার একটিও ধরা পড়েনি। সব মিলিয়ে চক্রটি কর ফাঁকি দিয়ে ১৩৪টি কনটেইনার খালাস করে নেয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির পুরো পদ্ধতি অকার্যকর করে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে জালিয়াত চক্রটি। ২০১৫-১৬ সালের আগপর্যন্ত পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র অনলাইনে যাচাই-বাছাইয়ের বিকল্প সুযোগ ছিল না। আর এ সুযোগই চক্রটি কাজে লাগিয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, এন এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি পোলট্রি ফিডের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় দেড় কোটি টাকার সিগারেট, ৩৫ কোটি টাকার মদ ও এলইডি টেলিভিশন আমদানি করলে তা জব্দ করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে দিদারুলের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

দিদারুলের যত সম্পদ

অনুসন্ধান–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, চোরাচালানের টাকায় দিদারুল তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মিরর ডেভেলপমেন্টের অফিস থেকে জব্দ করা দলিলাদির মধ্যে দিদারুলের স্থাবর সম্পত্তির কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর নামে-বেনামে আরও সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, দিদারুলের নামে ঢাকার খিলক্ষেত, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ভালুকায় মোট ১৯ বিঘা জমি আছে। এ ছাড়া তাঁর নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার বাজারমূল্য ১৩ কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকায় সাততলা বাড়ি আছে। এই বাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে ঢাকা, কেরানীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে সাত বিঘা জমি আছে।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, দিদারুল, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), দুদক ও সিআইডি পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।