রামপুরায় পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গাঁজা দিয়ে’ ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ

পূর্ব রামপুরার শহীদ মিনার সড়কে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে এসআই নুরুল ইসলাম
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

রাজধানীর রামপুরায় এক ব্যবসায়ীকে গাঁজা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার বিকেলে পূর্ব রামপুরা জামতলা শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাসেল মিয়া। রামপুরা থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত করতে গিয়ে তাঁরা আলী বিন তালহা নামের এক ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তবে পুলিশ বলেছে, স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলার প্রাথমিক অনুসন্ধান যাওয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।

তালহার ভাই আলী আল জিদান রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। তিনি সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এক ব্যক্তি লেনদেন নিয়ে ঝামেলা থেকে তাঁর বড় ভাই তালহার বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় জিডি করেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রামপুরা থানার এসআই নুরুল ইসলাম, এএসআই রাসেল মিয়া তাঁদের এক ‘সোর্স’কে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব রামপুরার শহীদ মিনার সড়কে তাঁদের বাসায় আসেন। এ সময় বাসা তল্লাশি করতে গেলে তাঁর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। এসআই নুরুল তাঁর ভাইকে একটি গাঁজার পোঁটলা দিয়ে ওই ঘটনায় আটক করতে চান। টের পেয়ে মহল্লাবাসী ছুটে আসেন। খবর পেয়ে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আসেন। অনেকেই পুরো ঘটনা ভিডিও করেন।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই নুরুল ইসলামের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো গাঁজার পোঁটলা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন। ব্যবসায়ী তালহার ভাই জিদান এ নিয়ে এসআই নুরুলের কাছে জবাব চান। একপর্যায়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা ব্যাগটি পাশে দাঁড়ানো এক আনসার সদস্যকে দিয়ে আসেন। এ সময় পলিথিনে মোড়ানো একটি পোঁটলা দেখিয়ে জিদান বলেন, এই গাঁজার পোঁটলা দিয়ে ফাঁসিয়ে তাঁর বড় ভাইকে ধরে নিতে এসেছেন এসআই নুরুল। তখন এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। এদিকে অপর পুলিশ সদস্য এএসআই রাসেল মিয়া এক ফাঁকে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। জিদান বলেন, তাঁর বাবার কাছে কাকুতি-মিনতির পর এসআই নুরুলকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না। শুনেছি উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়েছে।’ অভিযোগ ওঠা দুই পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলব।’

তবে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (খিলগাঁও জোন) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, সানিকুল নামের এক ব্যক্তি রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইউনুস আলীর ছেলে আলী বিন তালহার বিরুদ্ধে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করতে যায় রামপুরা থানার এসআই নুরুল ইসলাম। তখন সেখানে উপস্থিত তালহা ও তাঁর অফিসের কর্মচারীরা উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে লোক জড়ো করার জন্য এমন অভিযোগ দেয়।

পুলিশ কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব মামলার অভিযোগ আসলে আমরা গ্রহণ করি না। কিছু মামলার ক্ষেত্রে আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধান করি। এ ঘটনাটিও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ছিলো। সানিকুরের অভিযোগ এখনো আমাদের হাতে আছে।’