এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি করে ‘কোটি টাকা’ নিয়েছেন তাঁরা

মো. রাশেদুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল নোমান ওরফে মিরাজ, ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ভারতীয় ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে রেনেসাঁ এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এক তরুণ। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের সঙ্গে মিলে ওই এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

এ ঘটনায় মো. রাশেদুল ইসলাম (২৯) ও আবদুল্লাহ আল নোমান ওরফে মিরাজকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার নয়াপল্টন থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ জানিয়েছেন।

ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা শেষে তিনি রেনেসাঁর বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ নেন। মাস কয়েক আগে রাগারাগি করে চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। আর আবদুল্লাহ আল নোমান পেলিকন এয়ার সার্ভিস নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তিনি পড়াশোনা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পুলিশ জানায়, রেনেসাঁ দেশজুড়ে বিভিন্ন বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে ইন্ডিগোর টিকিট বিক্রি করে থাকে। হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি খেয়াল করে ইন্ডিগোর টিকিট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হয়েছে, রেনেসাঁ ইন্ডিগোকে টাকাও দেয়। কিন্তু তারা কোনো টাকা পাচ্ছে না। একসময় এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ছয় লাখ। বেশির ভাগ টিকিট আবার বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপালে। রেনেসাঁ তখন ফাতিন এন্টারপ্রাইজ নামে তাদের একটি বিক্রয় প্রতিনিধির কাছে টাকা চায়। ফাতিন জানায়, তারা গত তিন বছর ইন্ডিগোর টিকিটই বিক্রি করেনি।

এই প্রেক্ষাপটে রেনেসাঁ গত ১৩ জুন বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। বাংলাদেশ ও নেপালের যেসব আইপি অ্যাড্রেস থেকে টিকিটগুলো কাটা হয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করে পুলিশ। যাঁরা টিকিট কেটেছেন, এমন ব্যক্তিদের অনেকের সঙ্গে তারা কথাও বলে। তদন্তের একপর্যায়ে তারা টাকা লোপাটের জন্য দুজনকে শনাক্ত করে। এই দুজন শনাক্ত হওয়ার পরও পুলিশকে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়। কারণ, দুজনেই টানা অনেক দিন নেপালে অবস্থান করেন। সেখানকার ক্যাসিনোতে টাকা ওড়ানোর খবরও পেয়েছে পুলিশ। নেপাল থেকে ফেরার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশেদ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অসুস্থতাজনিত কারণে বেশ কিছুদিন অফিস কামাই করেছিলেন। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে তিনি রেনেসাঁর চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছেড়ে দিলেও যে পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে রেনেসাঁ টাকা লেনদেন করত, সেই পাসওয়ার্ডসহ আরও বেশ কিছু খুঁটিনাটি তথ্য তাঁর জানা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ আল নোমানকে দিয়ে ইন্ডিগোর সিস্টেমে ঢুকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে টিকিট বিক্রি করতেন, আর টাকাপয়সা লেনদেনের কাজটা নিজে করতেন। এভাবে তাঁরা দুজনে মিলে গত মে মাসের ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে এক কোটি ছয় লাখ টাকা লোপাট করেন। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনেই তাঁদের দায় স্বীকার করেছেন।

পুলিশ বলছে, দুজনের কাছ থেকে যেসব ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে, সেগুলোতে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে লগইন করার আলামত পাওয়া গেছে। তাঁদের দেশি–বিদেশি অপর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আদালত দুজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।