বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জনের জামিন বাতিল, কারাগারে পাঠানোর আদেশ

বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরী আজ সোমবার এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহজাহান মজুমদার।

পিপি শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আসামি বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় ৫ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত জামিন পান বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন। আসামিপক্ষ থেকে জামিন স্থায়ী করার আবেদন করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিন বাতিল চাওয়া হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত নিখিল রঞ্জন ধরের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বুয়েট শিক্ষকের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় তাঁর মক্কেল কোনোভাবে জড়িত নন। হয়রানি করার জন্য তাঁকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেলোয়ার নামের একজন আসামি তাঁর মক্কেলের নাম স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছিলেন। তবে মামলার কোনো সাক্ষী নিখিল রঞ্জন ধরের নাম উল্লেখ করেননি।

গত ২৯ জানুয়ারি বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জনসহ ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নিখিল রঞ্জন ধর ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত নই। বলা হচ্ছে, আমি ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আসতাম। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে নাম আসার পর বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের পদ থেকে নিখিল রঞ্জন ধরকে অব্যাহতি দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তাঁকে কোনো পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রাথমিক পরীক্ষা হয়। ১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ চাকরিপ্রত্যাশী অংশ নেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নামে। পরে ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত বিশ্বাস বাদী হয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্ত করে গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি পুলিশ। তবে মামলার অভিযোগপত্র থেকে শিক্ষক নিখিল রঞ্জনকে কেন বাদ দেওয়া হলো, তা জানতে চেয়ে ২৫ জানুয়ারি আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৯ জানুয়ারি সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি পুলিশ।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরসহ ৩৪ জনের নাম জানতে পেরেছে ডিবি। তবে ১৮ জনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন আসামি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম সদস্য হলেন জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা শামসুল হক, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন দেলোয়ার, কর্মী মুক্তারুজ্জামান রয়েল, রবিউল আউয়াল, পারভেজ মিয়া ও মিজানুর রহমান। এই ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরিকল্পনা, অর্থ গ্রহণসহ পুরো বিষয়ের বিস্তারিত উঠে আসে। দেলোয়ার, পারভেজ ও মোক্তার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস করবেন। সে অনুযায়ী তাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। রূপালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানে আলম পরীক্ষার্থী জোগাড় করেন। দেলোয়ারদের ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়।