একটি সেলুনে গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা আলী মর্তুজা চৌধুরী। ওই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। প্রধান আসামি হাবিব খান মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে পালিয়েছেন, বলছে পুলিশ।
জামিনে গিয়ে পলাতক আরও দুই আসামি মো. হাসান ও মো. ইসমাইল। বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছেন তিনজন। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সন্ত্রাসী গিট্টু নাসির, গণপিটুনিতে নিহত হন আইয়ুব আলী ওরফে রাশেদ এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সাইফুল ইসলাম। শিবির ক্যাডার তছলিম উদ্দিন ওরফে মন্টু ও মো. আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর কারাগারে।
২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ছড়ারকূল এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আজ আরেক ২৯ ডিসেম্বর। মাঝে কেটেছে ২১ বছর।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে মর্তুজার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।
ছেলে হত্যার বিচারের আশায় থাকা বাবা মারা যান ১২ বছর আগে। মা মারা যান আরও আগে। ২১ বছর আগের খুনের মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতিতে বিচার দেখে যেতে পারেন কি না, সন্দিহান বাদী বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আলী নাসের চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট ভাই মর্তুজা হত্যার বিচার বাবা দেখে যেতে পারেননি। আমি পারি কি না, সন্দিহান।’ তবে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ভাই হত্যার বিচারের জন্য লড়ে যাবেন সাবেক এই শিক্ষক।
মামলা যে অবস্থায় আছে
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রয়েছে মামলাটি। তবে ১১ মাস আগে আসামি মো. আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীরের পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে করা আবেদনে বর্তমানে স্থগিতাদেশ রয়েছে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আইনি লড়াই চালাচ্ছেন বলে জানান মামলার বাদী আলী নাসের চৌধুরী।
তিন বছর আগে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। শুরু হয় যুক্তিতর্ক শুনানি। কিন্তু সাক্ষীরা আসামিদের বিষয়ে মুখ খোলেননি। এর মধ্যে মামলাটি বিচারের জন্য আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ছয় সাক্ষীর আবার সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করে। এর মধ্যে একজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বাকি রয়েছেন আরও পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে পুলিশ ২০০৪ সালে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে আটজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। মামলার ৩৫ সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
আইনজীবীরা যা বলছেন
২১ বছরেও কেন আলোচিত এ মামলার বিচার শেষ হয়নি, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি ২০১৯ সালে যখন ট্রাইব্যুনালে আসে, তখন যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের বক্তব্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হবে। তাই আবার মামলার গুরুত্বপূর্ণ ছয় সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। ইতিমধ্যে একজন সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ বছরের শুরুতে এক আসামি উচ্চ আদালতে পুনরায় সাক্ষ্য নেওয়ার বিরুদ্ধে রিট করেন। যার কারণে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
আইয়ুব খান এই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পিপি ছিলেন। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য চেষ্টা করছেন।
বিচান চান পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীরা
ঘটনার দেড় বছর পর ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্তুজার বাড়িতে যান। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে সেদিন তিনি আশ্বাস দেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অপরাধীদের বিচার করা হবে।
দীর্ঘদিন নিজ দলের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও মতুর্জা হত্যার বিচার না হওয়াকে দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।
মামলার বাদী আলী নাসের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে এসে আশ্বাস দিলেও এখনো বিচার পাইনি। কবে বিচার পাব, জানি না।’