প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয়ে প্রতারণা করতেন বাবা–ছেলে

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুই সদস্যের সঙ্গে জাহিদুর রহমান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও তাঁর বাবা মজিবুর রহমান (বাঁ থেকে তৃতীয়)
ছবি: সংগৃহীত

বাবা প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস–২) পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিতেন। এ অভিযোগে জাহিদুর রহমান (৪১) ও তাঁর বাবা মজিবুর রহমানকে (৭৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২–এর কাছ থেকে এ অভিযোগে পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ গত শনিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে জাহিদুরকে গ্রেপ্তার করে।

জাহিদুরের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ভুয়া নিয়োগপত্র ও আটটি সিম কার্ড জব্দ করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বাবার ভুয়া পরিচয় ছাড়াও জাহিদুল নিজেকে জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা বলেও পরিচয় দিতেন।

অভিযানের তদারক কর্মকর্তা ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাহিদুর রহমান ও তাঁর বাবা মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করা হয়েছে। রোববার ওই মামলায় আদালত তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডিবি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ হাফিজুর রহমান (লিকু) ডিবির সাইবার ক্রাইমকে জানান, তাঁর ছদ্মবেশ ধারণ করে ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও বিভিন্ন প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তা আত্মসাৎ করেছেন। পরে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের একটি দল প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করে বাবা–ছেলেকে গ্রেপ্তার করে।

ডিবি সূত্র জানায়, জাহিদুর উত্তরার একটি ইরেজি মাধ্যমে ও লেভেল পর্যন্ত পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে জাহিদুরকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন তাঁর বাবা। এরপর জাহিদুর প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা পরিচয়ে প্রতারণা করতে থাকেন। অবশ্য তাঁর বাবা মজিবুর বিভিন্ন ছদ্মনামে প্রতারণা করেন। তিনি নিজেকে বিভিন্ন সময় সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন।

ডিবির সাইবার ক্রাইমের কর্মকর্তারা বলেন, দুই মাস আগে জাহিদুর তাঁর বাবা মজিবুরকে বিশ্বাস করাতে চান তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস–২–এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এবং তিনি তাঁর বাবাকে এপিএসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। এরপর জাহিদুর তাঁর অন্য একটি নম্বর দিয়ে তাঁর বাবাকে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে বলেন, জাহিদুরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি–সংক্রান্ত কোনো কাজ জাহিদুরকে দিলে তিনি তা করে দেবেন। এর পর থেকে মজিবুর বিভিন্ন ব্যক্তিকে এপিএস-২–এর মাধ্যমে চাকরি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতে থাকেন।