১১ বছর পার, অজানাই থাকল সেনাসদস্য নাসির ও তাঁর স্ত্রীর হত্যারহস্য

সাবেক সেনাসদস্য নাসির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

১১ বছর আগে রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসায় খুন হন সাবেক সেনাসদস্য নাসির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার। এত বছরেও চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ২০১৭ সালে খুনি শনাক্ত না করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর তদন্তের ভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। তিন বছর ধরে এ খুনের ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশের বিশেষায়িত এই শাখা। তবে এ পর্যন্ত খুনিকে শনাক্ত করা যায়নি।

মামলার কাগজপত্র ও পুলিশের তথ্য বলছে, সাবেক সেনাসদস্য নাসির উদ্দিন অবসরে যাওয়ার পর থেকে পরিবার নিয়ে দক্ষিণখানের সৈয়দ নগর এলাকায় নিজেদের বাড়িতে থাকতেন। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই নাসির উদ্দিন ও মাহমুদা দম্পতি বাসায় ছিলেন।

সেদিন বিকেল চারটার দিকে একজন প্রতিবেশী এসে দেখতে পান, বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগানো। ভেতরে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ৬৮ বছর বয়সী নাসির ঘরের ভেতরে পড়ে আছেন। আর তাঁর স্ত্রী শয়নকক্ষে মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন। ঘরের আলমারি ছিল খোলা।

সেনাসদস্য নাসিরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে গিয়ে জমি নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল কি না, সেটি জানার চেষ্টা করেছি। আবার তৃতীয় পক্ষের কেউ পেশাদার খুনিদের দিয়ে নাসির ও তাঁর স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান, পরিদর্শক, পিবিআই

এত বছরেও মা-বাবার খুনি শনাক্ত না হওয়ায় খুবই হতাশ বড় ছেলে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি, দিনের বেলা আমার মা-বাবাকে খুন করে পালিয়ে গেল খুনিরা, অথচ এক যুগেও তাঁরা কেউই ধরা পড়ল না। খুনি ধরতে পারল না ডিবি, সিআইডি। এখন পিবিআইও কোনো কিছুই করতে পারল না।’

মা-বাবার হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রথমে ছুটে এসেছিলেন সালাহউদ্দিন। তিনি তখন গুলশানের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাবা অবসর নেওয়ার পর তিনি আর মা বাসাতেই থাকতেন। আমাদের জানামতে, মা-বাবার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। আমাদের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তবু মা-বাবাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। বাজার থেকে ঘরে ফেরার পরপরই দুর্বৃত্তরা মা-বাবাকে খুন করে আবার বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে পালিয়ে যায়।’

নাসির ও মাহমুদা দম্পতির হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে নাসিরের ছোট ছেলে মোসলেহ উদ্দিন সাভার থেকে গাড়িতে করে দক্ষিণখানের বাসায় কিছু আসবাব পাঠিয়েছিলেন। আসবাব বহনকারী গাড়িটি ঘোরানোর সময় নাসিরের প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেনের লিচুগাছের ডাল ভেঙে যায়। এ নিয়ে দেলোয়ার ক্ষিপ্ত হন এবং নাসিরের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।নাসির ও তাঁর স্ত্রী খুনে জড়িত সন্দেহে ২০১৭ সালে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তবে সিআইডি পরে আদালতকে জানায়, এ খুনে দেলোয়ার জড়িত নন।

২০১২ সালের ৩১ জুলাই নাসির উদ্দিন ও মাহমুদা দম্পতি বাসায় ছিলেন। সেদিন বিকেল চারটার দিকে একজন প্রতিবেশী এসে দেখতে পান, বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগানো। ভেতরে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ৬৮ বছর বয়সী নাসির ঘরের ভেতর পড়ে আছেন। আর তাঁর স্ত্রী শয়নকক্ষে মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন। ঘরের আলমারি ছিল খোলা।

আদালতে জমা দেওয়া সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নাসির ও মাহমুদা দম্পতিকে খুনের ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী পাওয়া যায়নি। কারও সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা ছিল না। খুনে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দেলোয়ারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এই তিনজনের কেউই এতে জড়িত নন বলে আদালতকে জানায় সিআইডি।

নিহত দম্পতির ছোট ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোসলেহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনের পর ঘটনাস্থলে এসে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে, ছবি তোলে। কিন্তু ডিবি, সিআইডি খুনিকেই শনাক্ত করতে পারল না। পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। কিন্তু পিবিআই মামলার কিছুই করতে পারেনি।’

পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে গত জুলাই মাসে আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়, সেনাসদস্য নাসিরের সঙ্গে জমি নিয়ে কারও বিরোধ ছিল কি না, সেটি জানার চেষ্টা করছে তারা। এই দম্পতির কারও সঙ্গে ঝগড়া ছিল কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনাসদস্য নাসিরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে গিয়ে জমি নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল কি না, সেটি জানার চেষ্টা করেছি। আবার তৃতীয় পক্ষের কেউ পেশাদার খুনিদের দিয়ে নাসির ও তাঁর স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’