সরকারি সার আত্মসাৎ, ১১৬৩ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে মামলা

বিসিআইসি এর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সরকারিভাবে আমদানি করা রাসায়নিক সার আত্মসাৎ করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে মানি স্যুট (অর্থ আদায়) মামলা করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান রসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি)। গত ২৮ মার্চ ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলাটি করা হয়।
বিসিআইসির দুটি তদন্তে উঠে এসেছে, বন্দর থেকে খালাসের পর পরিবহনের দায়িত্বে থাকা পোটন ট্রেডার্স ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার গুদামে পৌঁছে না দিয়ে তা আত্মসাৎ করে। এতে সরকারের ৫৮২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসার পর আদালতে মামলাটি করা হয়।

বিসিআইসির পক্ষে আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, বিসিআইসির সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের চুক্তিতে উল্লেখ আছে, সার খালাসের পর সেটি পৌঁছে দিতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ কারণেই আর্থিক ক্ষতির দ্বিগুণ দাবি করে মানি স্যুট মামলা করা হয়েছে।
মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি তিনি। সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ বিষয়ে কামরুল আশরাফ খানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে প্রথম আলো। তবে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পোটন ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে কল করা ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁর নম্বরে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে বিসিআইসির দুটি তদন্তে উঠে আসা তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে গত ৫ জানুয়ারি ‘৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, বিসিআইসি চেয়ারম্যানকে এই অভিযোগের বিষয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিসিআইসির নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা ৩ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খালাসের পর সরকারি গুদামে পৌঁছে দিতে পোটন ট্রেডার্সের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। নিয়ম হলো, সারগুলো ৫০ দিনের মধ্যে গুদামে পৌঁছে দিতে হবে। খালাস হওয়া সারের মধ্যে ৭২ হাজার টন গুদামে সরবরাহ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি, যার বাজারমূল্য ৫৮২ কোটি টাকা।

পোটন ট্রেডার্সের গুদামে আমদানি করা সার মজুত আছে কি না, তা যাচাই করতে গত ১০ নভেম্বর বিসিআইসি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে গত ৮ ডিসেম্বর। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোটন ট্রেডার্স গত অক্টোবরের শুরুতে জানিয়েছিল যে তাদের ছয়টি গুদামে ৬৬ হাজার টন সার রয়েছে। তবে সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, গুদামে আছে মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন সার। তা–ও ব্যবহারের অনুপযোগী এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন

এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে সার আত্মসাতের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। গত ২৯ মার্চ দুদকের উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও মো. আবুল কালাম আজাদ। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ২ এপ্রিল বিসিআইসির কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।