অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিতুমীর কলেজের ছাত্রের মৃত্যু

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র ইউসুফ রেজা ওরফে রথি
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকার তিতুমীর কলেজের ছাত্র ইউসুফ রেজা ওরফে রথি (২৪) মারা গেছেন। বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ইউসুফ রেজা রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজের মার্কেটিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ইউসুফ রেজা সপরিবার দাউদকান্দি সদর উপজেলার দক্ষিণ গাজীপুরে থাকতেন। তাঁর বাবা রেজাউল করিম সরকার ঠিকাদার। বুধবার দুপুরে বাসা থেকে মোটরসাইকেলে করে ইউসুফ রেজা পূবালী ব্যাংকের দাউদকান্দি শাখায় ৫০ হাজার টাকা তুলতে যান। সেখান থেকে তাঁর বাসায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি। তাঁদের বাড়ির কাছের মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশে পড়ে ছিল তাঁর মোটরসাইকেলটি। এ সময় ইউসুফের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। তাঁর কাছে থাকা ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি।

পরে ইমাম ও মুয়াজ্জিন তাঁদের বাসায় গিয়ে এ খবর জানান। পরে স্বজনেরা ইউসুফকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল পাঁচটার দিকে ইউসুফকে অচেতন অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সন্ধ্যায় হাসপাতালে ইউসুফ রেজার চাচা জুয়েল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, প্রতারক চক্র চেতনানাশক কিছু খাইয়ে ইউসুফের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। তিনি জানান, ইউসুফ ঢাকায় থাকতেন না। তিনি দাউদকান্দি থেকে তিতুমীর কলেজে যাওয়া-আসা করতেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন ইউসুফ।

আরও দুজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে

ঢাকায় এসে অজ্ঞান পার্টির কাছে আট লাখ টাকা খুইয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ময়মনসিংহের কৃষক শফিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বুধবার রাজধানীর পল্লবী ও বনানীতে পৃথক ঘটনায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ হয়েছেন ব্যবসায়ী ফারুক সিকদার (৩৫) ও কৃষক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, দুজনের কাছ থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা মোট ১২ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন।

হাসপাতালে ফারুকের ভাগনে তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফারুকের বাড়ি ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ার জিরাবোতে। তিনি শার্ট–প্যান্টের ব্যবসা করেন।

বুধবার সকালে বাসা থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে প্যান্ট ও শার্ট কিনতে ঢাকায় আসেন। পরে এক ব্যক্তি ফারুকের পকেটে থাকা একটি মুঠোফোন থেকে কল করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ফারুক পল্লবীর পূরবী এলাকায় পড়ে আছেন। সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মিরপুরে ইসলামিয়া হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে স্বজনেরা এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন কৃষক শফিকুলের ছোট ভাই মো. আবদুস সামাদ বলেন, শফিকুল বুধবার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল পলাশিয়া গ্রাম থেকে একটি ব্যাগে আট লাখ টাকা নিয়ে বনানীতে একটি অফিসের উদ্দেশে আসেন। তাঁদের ছোট দুই ভাই শরিফ ও আরিফ সৌদি আরবে যাবেন। তাঁদের ভিসার টাকা জমা দিতে এসেছিলেন তিনি‌।

আবদুস সামাদ জানান, দুপুরে তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। তাঁকে বলা হয়, তাঁর ভাই ঢাকার বনানীতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে এসে দেখেন, ভাইয়ের সঙ্গে থাকা আট লাখ টাকা নেই।