অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৬

প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তার ছয় সদস্যকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রাজধানীতে মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে ১৪ ডিসেম্বরছবি: প্রথম আলো

অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার বড় প্ল্যাটফর্ম দারাজের কাছাকাছি নাম ও অন্যান্য বাহারি নাম দিয়ে পেজ খুলেছিলেন তাঁরা। এরপর মানসম্মত পণ্যের ছবি পোস্ট করে গ্রাহকদের আর্কষণ করতেন। কিন্তু অর্ডারের পর পাঠাতেন নষ্ট ও ভাঙাচোরা পণ্য।

এভাবে প্রতারিত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। অবশেষে এই প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিবির লালবাগ বিভাগ প্রতারক তিনটি চক্রের ছয়জনকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে। চার বছর ধরে তাঁরা প্রতারণা করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রকি বিশ্বাস (২৫), মো. হেকমত আলী (২৭), মো. কচিবুর রহমান (২২), শিমুল মণ্ডল (২৭), মো. আনিছুর রহমান শেখ (২৯) ও মো. মাজহারুল ইসলাম।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতারক চক্রগুলো ফেসবুকে ২৪টি পেজ চালাচ্ছিল। এসব পেজে অল্প দামে ভালো মানের মুঠোফোন, জুতা, ঘড়ি, থ্রি পিস, শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতেন তাঁরা।

দেড়শ টাকা দিয়ে পণ্য বুকিং দিতে হতো আগ্রহীদের। তারপর তাঁরা একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নকল, ভাঙাচোরা, নষ্ট ও নিম্নমানের সামগ্রী প্যাকেটে ভরে পাঠিয়ে দিতেন। গ্রাহকেরা টাকা পরিশোধ করে ওই কুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টার থেকে পণ্য নিতেন। তারপর মোড়ক খুলে বুঝতেন তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন।

প্রতারক চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার মুঠোফোনসহ বিভিন্ন সামগ্রী
ছবি: প্রথম আলো

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যে ২৪টি পেজ থেকে প্রতারক চক্র প্রতারণা করছিল, সেগুলো হলো দারাজ অনলাইন, দারাজ অনলাইন ৭১, দারাজ অনলাইন শপ, দারাজ এক্সপ্রেস, দারাজ অনলাইন বিডি, ফ্যাশন জোন, গ্যালাক্সি ২৪, অনলাইন মোবাইল গ্যালাক্সি, শপিং সেন্টার নেট, শপিং জোন বিডি, শপিং ডেলস, স্মার্ট শপ বিডি, উইন্টার কালেকশন, সোনিয়া ফ্যাশন হাউজ, সু বাজার ডট কম, ফ্যাশন হাউজ ২৪, চায়না ফ্যাশন বিডি, বিডি ফ্যাশন শপ ইত্যাদি।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, অনেকেই প্রতারিত হওয়ার পরও পুলিশে অভিযোগ করেননি। শুধুমাত্র একজন ভুক্তভোগী থানায় জানিয়েছিলেন। এরপরই পুলিশ কাজ শুরু করে।

সংবাদ সম্মেলনে একজন ভুক্তভোগীকে হাজির করা হয়। তিনি মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ১৫ হাজার টাকার বেশি দামি মুঠোফোন পছন্দ করেন। কিন্তু বিক্রেতা সাড়ে সাত হাজার টাকায় তাঁকে দুটি মুঠোফোন সাধেন। চুক্তি অনুযায়ী দাম পরিশোধ করার পর ওই শিক্ষার্থী হাতে পান নষ্ট, সস্তা একটি মুঠোফোন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার ছয়জনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসের ২০২টি বুকিং মেমো, পণ্য বিক্রির ১১৭টি ক্যাশ মেমো, বিভিন্ন রঙের ব্যবহার অযোগ্য ৪৬ জোড়া জুতা, বিভিন্ন মডেলের ১২টি ভাঙাচোরা মুঠোফোন, ১০টি চার্জার, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ ও ১৪টি মুঠোফোন।