অন্যের জমিতে তাঁর চোখ

সরকারি দলের এই সাংসদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ১০টি জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দখল করা জমি

  • ছোট কাটারায় ৮ কাঠা।

  • চকবাজারের ‘জাহাজবাড়ি’।

  • বিআইডব্লিউটিএর ১ একর।

  • সবুজবাগে বাড়ি, গ্রিন রোডে ৮ কাঠা।

  • তিব্বত হল ও বধির স্কুলের ১ একর।

  • সোনারগাঁয়ে সরকারি ১৫ বিঘা ও গ্রামবাসীর ৮ বিঘা।

চকবাজারের ‘জাহাজবাড়ি’ ছিল পুরান ঢাকার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাতের আঁধারে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই ভবন ভেঙে ফেলা হয়। পরে সেখানে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে
ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা-৭ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ হাজি মো. সেলিমের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকায় জমি দখলের অভিযোগ পুরোনো। ক্ষমতার দাপটে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এখন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ১০টি দখলের খবর পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার ও তাঁর বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের পর পুরান ঢাকার দাপুটে এই সাংসদের একের পর এক দখলকাহিনি নতুন করে বেরিয়ে আসছে। তবে জমি বেহাত হয়েছে, এমন অনেকে মুখ খুলতে এখনো ভয় পাচ্ছেন। কারণ, গত ২৬ অক্টোবর হাজি সেলিমের বাসায় র‌্যাবের অভিযানের পর দীর্ঘদিন তাঁর দখলে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ২০ শতাংশ জমি উদ্ধার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুরান ঢাকার মৌলভিবাজারের সেই জমি আবার হাজি সেলিম দখল করে নিয়েছেন বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের হেড অব সিকিউরিটি প্রটোকল মো. আসাদুজ্জামান।

হাজি সেলিমের দখল করা জমির মধ্যে আছে পুরান ঢাকার ছোট কাটারায় ৮ কাঠা জমি, চকবাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’, কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক একর জমি, সবুজবাগে একটি বাড়ি, গ্রিন রোডে সরকারি ওয়াপদা বাংলোর ৮ কাঠা জমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল, বধির স্কুলের জমি, মৌলভীবাজারে অগ্রণী ব্যাংকের জমি এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ১৫ বিঘা সরকারি জমি দখল ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর ৮ বিঘা জমি।

এসব জমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সাংসদ হাজি সেলিম ও তাঁর ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন বেলালের মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়। তাঁরা সাড়া দেননি। পরে হাজি সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোর কাছে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ফজলুর রহমানের দোতলা বাড়ি

সম্প্রতি পুরান ঢাকার ছোট কাটারায় আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত স্থানীয় ফজলুর রহমানের দোতলা বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন হাজি সেলিমের লোকজন। জমির চারদিকটা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে নির্মাণকাজও শুরু করেছেন। হাজি সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথের দাবি, ওই জমি সাংসদ হাজি সেলিম কিনে নিয়েছেন। ওই জমির পাশেই ফজলুর রহমানের ভাই রাজ রহমানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইয়ের আট কাঠা জমি হাজি সেলিম দখল করে নিয়েছেন। কীভাবে জমি উদ্ধার করবেন, তাও বুঝে উঠতে পারছেন না। সাংসদের রোষানলে পড়ার ভয়ে এ নিয়ে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানান।

স্থানীয় লোকজন জানান, এই জমির বর্তমান বাজারদর আট কোটি টাকার ওপরে। ওই এলাকায় হাজি সেলিমের আরও কয়েকটি জমি রয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী জাহাজবাড়ি দখল

গত বছরের ৫ জুন (ঈদুল ফিতরের) রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ‘জাহাজবাড়ি’ নামের ঐতিহ্যবাহী একটি দোতলা ভবন ভেঙে ফেলে সেটি দখল করে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি এলাকার সাংসদ হাজি সেলিমের লোকজনই ভেঙেছেন। পরে সাংসদ জায়গাটি দখল করে নেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজার প্রধান সড়কের পাশে সেই ভবনের জমিতে অর্ধশতাধিক ছোট ছোট দোকান তৈরি করে তাতে চুড়ি ও কসমেটিকসের দোকান গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বললেন, হাজি সেলিম দখল পাকাপোক্ত করতে এখানে এসব টং দোকান বসিয়েছেন।

মো. সেলিম নামের একজন দোকানি বলেন, ‘হাজি সেলিম আমাদের বসিয়েছেন। তবে এ জন্য তাঁকে টাকা দিতে হয় না।’

জাহাজবাড়ি ভাঙার সময় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন শামীম অর রশীদ তালুকদার। এখন ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। এ জন্য তখন ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় একটি জিডিও করা হয়।

এটিও হাজি সেলিমের কেনা জমি বলে দাবি করেন তাঁর আইনজীবী প্রাণনাথ। তবে আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, একটি রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার ২ হাজার ২০০ ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনার ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ভেঙে ফেলা জাহাজবাড়িটি এই তালিকায় আছে।

সরকারি জমিতে স্থাপনা

কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক একর জমি দখল করে কয়েকটি পাকা ঘর তুলেছেন হাজি সেলিম। সেখানে পাথরের স্তূপ ও ক্রেন রাখা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর সাবেক যুগ্ম পরিচালক, বর্তমানে মতিঝিল নৌপরিবহন অধিদপ্তরে কর্মরত আরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বদলি হওয়ার আগেই ঝাউচরে নদীর তীরে হাজি সেলিমের দখলে থাকা এক একর জমি উদ্ধারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ওই জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবেন।

২০১৩ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেন ২০১৬ সালে। এখন পর্যন্ত ৯ তলার ছাদ হয়েছে। তবে তাঁদের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি, বাড়ির নকশাও দেখানো হয়নি। হাজি সেলিমের লোকেরা এক কাঠা জমি কম আছে অভিযোগ তুলে একটি ফ্ল্যাটও দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে হাজি সেলিমের বাসায় অনেকবার গিয়েছেন, তিনি প্রতিবার হাতের ইশারায় বিদায় করে দেন।
মাহমুদুল হাসান

নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে দখলের পাঁয়তারা

২০১৩ সালে হাজি সেলিমের মদিনা ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড সবুজবাগের ৮৭/২ পশ্চিম মাদারটেকের বাসিন্দা মো. আবুল হাশেমের তিন কাঠা জমিতে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করার চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা হয়, আগাম (সাইনিং মানি) ৩০ লাখ টাকা এবং রাজউক থেকে ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনে আবুল হাশেমকে মোট ৫০ লাখ টাকা দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবুল হাশেম টাকা পাননি। এখন পুরো জমিই দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছেন।

বাড়ির চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আবুল হাশেম। তাঁর ছেলে মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেন ২০১৬ সালে। এখন পর্যন্ত ৯ তলার ছাদ হয়েছে। তবে তাঁদের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি, বাড়ির নকশাও দেখানো হয়নি। হাজি সেলিমের লোকেরা এক কাঠা জমি কম আছে অভিযোগ তুলে একটি ফ্ল্যাটও দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে হাজি সেলিমের বাসায় অনেকবার গিয়েছেন, তিনি প্রতিবার হাতের ইশারায় বিদায় করে দেন।

মাহমুদুল হাসান বলেন, অর্থের অভাবে তাঁর বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তিনি জমি উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গ্রিন রোডে ওয়াপদার জমি

১০/এ গ্রিন রোডে ওয়াপদা বাংলোর ৮ কাঠা জমি ১৯৯০ সাল থেকে হাজি সেলিমের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তিনি হোল্ডিং নম্বর বদল করে ৬৪/এ করেন। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন, হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গভীর রাতে এখানে আসতেন।

তিব্বত হল

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর ওয়াইজঘাটের ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জমির ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল স্থানীয় সাংসদ হাজি সেলিমের দখলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় আন্দোলন ও সরকারের ওপরের মহলের আশ্বাসের পরও হাজি সেলিমের কাছ থেকে হলটি উদ্ধার হয়নি।

২০০১ সালে হলটির অবকাঠামো বদলে ফেলে ১০ তলা বিশাল ভবন নির্মাণ করে স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ গড়ে তোলেন হাজি সেলিম। মার্কেটে প্রায় এক হাজার দোকান রয়েছে।

২০১৪ সালে হল উদ্ধারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে সরকারের ঢাকা-৬ আসনের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদকে আহ্বায়ক করে একটি উদ্ধার কমিটি গঠন করে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ফিরোজ রশীদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বহু বছর আগে ছাত্রনেতাদের যোগসাজশে হল হাতছাড়া হয়ে যায়। তাঁরাই ভূমিদস্যুদের কাছে হোস্টেল হস্তান্তর করেছেন। মামলা-মোকদ্দমা করে এখনো দখলে রেখেছেন।

সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এফ এম শরিফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে হল উদ্ধারে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, প্রশাসনের আগ্রহ থাকে, তাহলে এখনো হল উদ্ধার করা সম্ভব।

ঢাকা-৬ আসনের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদকে আহ্বায়ক করে একটি উদ্ধার কমিটি গঠন করে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ফিরোজ রশীদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বহু বছর আগে ছাত্রনেতাদের যোগসাজশে হল হাতছাড়া হয়ে যায়। তাঁরাই ভূমিদস্যুদের কাছে হোস্টেল হস্তান্তর করেছেন। মামলা-মোকদ্দমা করে এখনো দখলে রেখেছেন।
হাজি সেলিম
ছবি: সংগৃহীত

বধির স্কুলের জমিতে ফিলিং স্টেশন

সোয়ারীঘাটে বধির স্কুলের এক একর জমি দখল করে মদিনা ফিলিং স্টেশন গড়ে তুলেছেন হাজি সেলিম। স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০০৫ সালে ৫ লাখ টাকা প্রতীকী মূল্যে এই খাসজমি বধির হাইস্কুলের নামে বরাদ্দ দেয় সরকার। জেলা প্রশাসন দখল বুঝিয়ে দেওয়ার পর জমিটি দখল করে নেন হাজি সেলিম।

মদিনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ভূমি ও আইন) নুরুল হামিদের দাবি, জমিটি নিয়ে আদালতে একটি মামলা আছে।

সোনারগাঁয়ে ১৫ বিঘা খাসজমি দখল

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন মেঘনা ঘাটে হাজি সেলিমের দখলে থাকা ১৫ বিঘা খাসজমির সন্ধান পায়। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, সাংসদ হাজি সেলিমের দখলে থাকা এই খাসজমির বর্তমান বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত ৫ নভেম্বর ১০ শতাংশের মতো জমি উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন মদিনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি সেলিম বরাবর উচ্ছেদ নোটিশ পাঠিয়ে স্থাপনা সাত দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে বা ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে আইনজীবী প্রাণনাথ বলেন, ২০০৩ সালে সাংসদ হাজি সেলিম মদিনা গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি এসব খাসজমি এক এক বছরের অটো রিনিউ পদ্ধতিতে লিজ নিয়েছিলেন। প্রতিবছরই তা অটো রিনিউ হয়ে যায়। এসব জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও লোকবলের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তাঁরা সরকারি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।
আল মামুন , উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)

থেমে গেছে প্রশাসনের তৎপরতা

প্রথম আলোসোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা ঘাট এলাকায় সরকারি ১৫ বিঘা জমি দখল করে হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের টাইগার ব্যান্ড সিমেন্ট কারখানা করা হয়েছে। ১ নভেম্বর সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন সেখানে আধ ঘণ্টার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে টিনের তৈরি দুটি টংঘর ভেঙে দেন। তিনি সরকারি জমিতে গড়ে তোলা সব ধরনের স্থাপনা চার দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর ৫ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারি জায়গা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মদিনা গ্রুপ সরকারি জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ মানেনি। সরকারি খাসজমির অধিকাংশ স্থানজুড়ে কয়লা স্তূপ করে রাখা আছে।

জমি উদ্ধার তৎপরতা থেমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও লোকবলের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তাঁরা সরকারি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।

‘সরকারি জায়গা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছি। ব্যক্তিমালিকানা জমি দখলের সঙ্গে আমাদের কোম্পানি জড়িত নয়।’
মহি উদ্দিন আহাম্মেদ, মদিনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ভূমি)

এদিকে ৪ নভেম্বর পিরোজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ১০ জন বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, মদিনা গ্রুপের লোকজন ২০১০ সালে এক রাতে গ্রামবাসীদের আট বিঘা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে নেন। এরপর চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন।

মদিনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ভূমি) মহি উদ্দিন আহাম্মেদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘সরকারি জায়গা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছি। ব্যক্তিমালিকানা জমি দখলের সঙ্গে আমাদের কোম্পানি জড়িত নয়।’

একজন সাংসদ যেখানে মানুষের সুরক্ষার জন্য কাজ করার কথা, সেখানে তিনিই সরকারি-বেসরকারি সম্পদ দখল করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি কর্মকর্তাদের শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনে তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, দখল ও লুটপাটে জড়িতরা মনে করছেন, সরকারি দলে থাকলে কেউ তাঁদের কিছু করতে পারবেন না। এ কারণে হাজি সেলিমের দখলে থাকা জমি উদ্ধার করতে দলকে ভূমিকা রাখতে হবে। যাতে অন্য জনপ্রতিনিধিরা বুঝতে পারেন তাঁদের অপকর্মের দায় দল নেবে না।