অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

শেরপুরের শ্রীবরদীর ঐতিহ্যবাহী টেঙ্গরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু রায়হান ও শিক্ষক প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন অভিভাবক সদস্য মো. গোলাম রসুল, মাহফুজুল হক ও বেলায়েত হোসেন জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দুদকের উপপরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসককে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে তৎকালীন জমিদার কামিনী প্রসাদ রায় ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের দান করা ৩২ দশমিক শূন্য ৪ একর জমিতে শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা বাজারে টেঙ্গরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরিচালিত এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ১ হাজার ৫৬ জন। শিক্ষক আছেন ১৫ জন। ভায়াডাঙ্গা বাজারে বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমাণ জমিতে একটি ব্যাংকসহ অর্ধশতাধিক দোকানঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের আবাদি জমি আছে প্রায় ২৮ একর। দুটি জলাশয়ে আছে সাড়ে তিন একর জমি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আবাদি জমি থেকে প্রতিবছর বিদ্যালয়ের আয় প্রায় আট লাখ টাকা। জলাশয় থেকে আয় প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ভায়াডাঙ্গা বাজারে নির্মিত বিভিন্ন দোকানঘর থেকে প্রতিবছর আয় হয় প্রায় ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি বাবদ আয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেতন বাবদ আদায় করা হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া নবম ও দশম শ্রেণির প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বেতন বাবদ ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। জেএসসি পরীক্ষার্থীদের সেশন চার্জ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন চার্জ বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও ফরম পূরণ বাবদ ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সরকার ছাত্রীদের বেতন মওকুফ করলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করে থাকে। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলেও সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো সভা ডাকেন না।

অভিযোগে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিনা জামানতে তাঁর নিজের ও আত্মীয়স্বজনদের নামে বিদ্যালয়ের জমিতে দোকানঘর বানিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন। এ ছাড়া সিদ্দিকুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান ও শিক্ষক প্রতিনিধি আশিকুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের জমিতে আরও দোকানঘর তৈরি করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে জামানত বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।

অভিভাবক সদস্য গোলাম রসুল, মাহফুজুল হক ও বেলায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের নামে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হলেও বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা জমা হয়নি। ব্যাংক হিসাবে আছে সম্প্রতি গাছ বিক্রি করার মাত্র আড়াই লাখ টাকা আর ৫০ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত। ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে তাঁরা দাবি করেন। বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও আয় থাকার পরও ৮০ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টির অবকাঠামোর দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো টিনের ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ করতে হয়। ক্লাস না নিয়ে কিছুসংখ্যক শিক্ষক প্রাইভেট–বাণিজ্যে নিয়োজিত আছেন। শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে না চাইলে তাদের অকৃতকার্য করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু রায়হান বলেন, অনৈতিক সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন অভিভাবক সদস্য মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আবাদি জমির ইজারা, বার্ষিক পরীক্ষার ফি, আংশিক বেতন, নতুন ভর্তি, সেশন চার্জসহ মোট আয় ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। দোকানঘর ভাড়া থেকে মোট আয় ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় ৬ লাখ ১ হাজার টাকা, যা ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়েছে। আয়ের অংশগুলো দিয়ে ঘর নির্মাণ, উন্নয়নমূলক কাজ, বেঞ্চ তৈরি, শৌচাগার মেরামত, টিনশেড ঘর নির্মাণ, বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়। তবে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয় না বলে তিনি স্বীকার করেন।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রধান শিক্ষকসহ তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামানতের টাকা নিয়েই দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া যা ভাড়া পাওয়া যায়, তা বিদ্যালয়ের পিয়ন, নৈশপ্রহরীসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয়ে যায়।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।