অস্ত্রধারী সেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা

শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে পিস্তল হাতে ধাওয়া করেন ঠিকাদার রেজাউল আলম (বাঁয়ে)। লোহাগড়া, নাড়াইল, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে পিস্তল হাতে ধাওয়া করেন ঠিকাদার রেজাউল আলম (বাঁয়ে)। লোহাগড়া, নাড়াইল, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

নড়াইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিবাদ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে মামলাটি করে।

নড়াইল সদর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলায় ঠিকাদারসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে হয়েছে। নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন ঠিকাদার রেজাউল আলম, তাঁর ভাই কামরুল আলম, ঘটনায় জড়িত ছাত্রীর বাবা মো. মইন উল্লাহ এবং দুখু নামের এক ব্যক্তি।

মামলার বাদী শিক্ষার্থীর নাম মো. জাকারিয়া খান। স্কুল সূত্রে জানা যায়, জাকারিয়া একই বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। জাকারিয়া শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় হওয়া বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার সকালে প্রাইভেট পড়ানোর সময় নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বেয়াদবি করলে শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক তার সঙ্গে রাগারাগি করেন। ওই ছাত্রী অন্য এক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছাত্রী বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে জানায়। এতে ছাত্রীর বাবা ঠিকাদার মো. মইন উল্লাহ শিক্ষক প্রদেশের বাসায় এসে তাঁকে মারধর করেন। শিক্ষক প্রদেশের জামার কলার ধরে রাস্তায় এনে লাঞ্ছিত করেন। এ ছাড়া প্রদেশকে নড়াইল ছাড়তে হুমকি দেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে রোববার সকালে বিদ্যালয়ের ৩০০ থেকে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আসামিরা পিস্তল দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন এবং দ্রুত ওই এলাকা থেকে সরে যেতে বলেন। হুমকি দেওয়ার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাঁরা চড়-থাপ্পড়ও মারেন। এ সময় ঠিকাদার রেজাউল শিক্ষার্থী জাকারিয়ার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সোমবার বিকেলে ঠিকাদার রেজাউল আলম প্রথম আলোর কাছে এক লিখিত বক্তব্য পাঠান। তিনি বলেন, স্কুলের ছাত্ররা তাঁর সন্তানের মতো। তাদের হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ঘটনার সময় তিনি পিস্তলটি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে রাখার জন্য বের করেছিলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মহীতোষ কুমার দে বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার সকাল থেকে ক্লাস করেছে। পরিবেশ এখন শান্ত। বিষয়টি নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ারুল ইসলামের কক্ষে বৈঠক করে মীমাংসা করা হয়েছে। বৈঠক থেকে বের হওয়ার পর দেখা যায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছিল। এ সময় কিছু লোক শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যায়।

শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমার দায়িত্ব। তাদের তৈরি করতে ভালোবাসা ও শাসন দুটিই প্রয়োজন। আমি তা করি। শিক্ষার্থীরা আমাকে মন থেকে ভালোবাসে। কারও প্রতি রাগ-ক্ষোভ আমার নেই।’

নড়াইল সদর থানার ওসি মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঠিকাদার রেজাউল আলম তাঁর নিবন্ধন করা পিস্তলটি থানায় জমা দিয়েছেন। সেটি থানায় রক্ষিত আছে। তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিরা পালাতক, তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।