আগস্টে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ১, জুলাইয়ে ৪৫

বিচারবহির্ভুত হত্যার প্রতীকী ছবি
ছবি: প্রথম আলো

জুলাই মাসের চেয়ে আগস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কমেছে। জুলাইয়ে ছিল ৪৫ জন এবং আগস্টে হয়েছেন ১ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, আগস্টে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এ বছরের আগস্ট মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আগস্টে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বন্দুকযুদ্ধ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া, হত্যা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতা পর্যালোচনা করে তারা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি জানায়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি, সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন, নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকারের লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটে চলেছে।

দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বলেছে, আগস্ট মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১ জন। জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। জুলাই মাসের তুলনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমলেও এ মাসে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো ও চাঁদাবাজিসংক্রান্ত অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দুজনের মৃত্যু, একজনকে নির্যাতন ও সাতজনকে হয়রানি করার ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে থানাহাজতে একজনের মৃত্যুসহ আটটি ঘটনা ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জে ‘মৃত’ কিশোরীর ৫১ দিন পর ফিরে আসার ঘটনাকে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, অন্যথায় পুলিশের দেওয়া কোনো তথ্য বা বক্তব্যই আর মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে না।

আগস্ট মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। এ সময়ে ২১১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৮৬টি। যদিও জুলাই মাসে ১৭২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া আগস্ট মাসে ৬৩ জন নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ছয়জন শিশু ও ৫৭ জন নারী। তবে জুলাই মাসে হত্যাকাণ্ডের শিকার নারী ও শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। এ সময়ে ১৯ জন নারী ও কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের চিত্র আগস্ট মাসে উদ্বেগজনক থাকার কথা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৫ জন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জুলাই মাসে ১২ সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত বলে উল্লেখ করেছে তারা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আগস্ট মাসে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুলাই এ সংখ্যা ছিল পাঁচজন। এ ছাড়া অপহরণ ও গুমের ঘটনার কথাও জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন।

আগস্ট মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যদিও জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল সাতজন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলছে, এই করোনা মহামারির সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যে দায়িত্ব পালন করছেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধে জবাবদিহি অত্যাবশ্যক। এ ছাড়া জনগণের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষা ও ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে এ সংগঠন।