আবরারের কী দোষ ছিল, প্রশ্ন মায়ের

ছেলে আবরারের স্মৃতি চোখে পানি আনে মায়ের। মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে
প্রথম আলো

গত বছরের ৫ অক্টোবর বিকেলে মা রোকেয়া বেগম, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজকে নিয়ে ঘরে বসে গল্প করছিলেন বুয়েটছাত্র আরবার ফাহাদ। পরের দিন ৬ অক্টোবর আবরার ফাহাদ ঢাকা যাবেন। এ জন্য বাসের টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। গল্পের ফাঁকে ৫টা ৩২ মিনিটে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ পোস্ট।
কুষ্টিয়ার বাসায় বসে মঙ্গলবার আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলছিলেন, ‘সেদিন বিকেলে সোফায় বসে আমাদের সামনেই পোস্টটি দিয়েছিলেন ভাই। মাত্র একদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফেরার কথা ছিল। এরপর কী নৃশংস ঘটনা ঘটল, সবাই দেখেছেন।’
আবরারের সেই পোস্টে ৪ লাখ ২৭ হাজার লাইক পড়েছে। ৭০ হাজারবার শেয়ার হয়েছে। তিন প্যারার পোস্টটি মা রোকেয়া বেগম পড়েছেন ও দেখেছেন। মায়ের প্রশ্ন, ‘আমার ছেলে তো নিজের কথা কিছু বলেনি বা লেখেনি। যেটা লিখেছে সেটা তো সে কোনো না কোনো বইয়ে পড়েছিল। সেই পড়ালেখা যদি তাঁর জীবন কেড়ে নেয়, তাহলে বইগুলো কেন আছে? আমার ছেলের কী দোষ ছিল?’

আবরারের ব্যবহৃত জিনিস কুষ্টিয়ার বাড়িতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে
প্রথম আলো

রোকেয়া বেগম ছেলেকে কখনোই রাজনীতি করতে দিতেন না। বলতেন, রাজনীতি করলে পড়াশোনা হবে না। রাজনীতিতে জড়ালে সাময়িক হয়তো ভালো থাকবে। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে পালা বদল হলে কখনোই কেউ ভালো থাকে না।
ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে আশাবাদী মা রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, তিনি প্রত্যেক আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান। ঘটনার পর থেকে যেভাবে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম কাজ করেছে, তাতে তাঁর পরিবার খুবই কৃতজ্ঞ। তবে তিনজন আসামি বাইরে থাকায় তাঁরা আতঙ্কিত। জানালেন, এই এক বছরে দেশ-বিদেশের অনেকেই ফোন করে তাদের খোঁজ নিয়েছেন। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় গেছেন। ছেলে হত্যার বাদী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে এই মাস তাঁকে ঢাকাতেই থাকতে হচ্ছে। ছেলে হত্যার পর আর ঢাকায় যেতে মন চায় না মায়ের। ছেলের স্মৃতি মনে করে ঢাকাতে যেতে পারেন না। হত্যা মামলার রায়ের দিনও তিনি ঢাকায় যেতে চান না।

আরও পড়ুন