আবু নাসেরের জামিন হয়নি, চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশ

কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত কারাবন্দী আবু নাসের চৌধুরীর জামিন হয়নি। জামিন চেয়ে তাঁর করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন।

এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন নাসের চৌধুরী, যা চেম্বার আদালত হয়ে আজ বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে নাসেরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

পরে আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে নাসের চৌধুরীর জামিন চাওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগ জামিন আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে আবু নাসের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠাতে বলা হয়েছে।’

২০০৪ সালে ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হন কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী। এ ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ইমতাজুল ইসলাম এজাহার করেন। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল গোলাম রাব্বানী মারা যান। পরে এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত আবু নাসের চৌধুরীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আবু নাসের চৌধুরী, যা গত বছরের ২১ জুলাই আপিল হিসেবে গণ্য হয়। এরপর ১১ নভেম্বর জামিন চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি।

গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। এতে আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ে তাঁদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়েছিল। হাইকোর্ট আরেক আসামি মো. সেলিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের আলোকে নতুন করে রায় দিতে বিচারিক আদালতে নথি পাঠাতে বলা হয়।

রায়ের অনুলিপি পাওয়ায় আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে চার আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, মো. সেলিম ও সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর একজন সোহেল ওরফে আবদুল মালেককে খালাস দেন হাইকোর্ট।

মামলাসংশ্লিষ্ট আইনজীবীর তথ্য, ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এখন তাঁরা কারাগারে আছেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে ২০১৬ সালের ১০ মে হুমায়ুন কবির চৌধুরী মারা যান। আর সাইফুল ইসলাম জামিনে আছেন। এ ছাড়া সোহেল ওরফে আবদুল মালেক উচ্চ আদালতের রায়ের পর মুক্তি পেয়েছেন।