আরও ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়

তদন্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সপক্ষে প্রমাণ না পাওয়ায় আরও ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ (প্রত্যয়নপত্র) ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন অধিদপ্তর, সংস্থা ও ব্যাংক কর্মকর্তা, অধ্যক্ষ, শিক্ষকও রয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এই ৩০ জনের সনদ বাতিল-সংক্রান্ত নথিতে গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তদন্ত ও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং এ-সংক্রান্ত গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তদন্তে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য দালিলিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পাঁচ সচিবসহ ২১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করল। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের সনদ স্থগিত রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চাকরির বয়সসীমা এক বছর বাড়ানোর পর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার হিড়িক পড়ে। গত পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। এই সনদ দিয়ে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে বর্ধিত সময় শেষে কেউ কেউ অবসরও নিয়েছেন। কেউ কেউ এখন চাকরি করছেন।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার যে ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের নথি অনুমোদন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইব্রাহীম মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সিডিসি) ফজলুর রহমান, কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুস সামাদ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান বেগম শামীমা আখতার, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রহমত আলী বিশ্বাস, শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড রক্ষা প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন, জালশুলকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. আবদুর বারী খান, নওগাঁর অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা খালেদুর রহমান, দেবহাটা রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজ আলী, মেহেরপুরের গাংনীর সহকারী শিক্ষক ইদ্রিস আলী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মচারী মতিউর রহমান শেখ, জনতা ব্যাংকের সাপোর্ট স্টাফ হাসমতুল্যা, নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দিলীপ কুমার দাস, ভোলার সাধারণ প্রশাসন শাখা সহকারী এনামুল হক খান, পাউবোর ডিইও এনামুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ।

যশোরের মাজহারুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামরুল ইসলাম ও কাফন মিয়া, মানিকগঞ্জের শাহজাহান আলম, রাজশাহীর নুরুল ইসলাম, লালমনিরহাটের সাইফুল ইসলাম ও নরসিংদীর জসিম উদ্দিনের পদবি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, এনএসআই ও জেলা প্রশাসকেরা এসব মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাই করে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো দালিলিক প্রমাণ পাননি। যে কারণে তাঁরা এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিলের সুপারিশ করেন। দু-তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর শুধু সনদ বাতিল বা তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাই নয়, এসব সনদ ব্যবহার করে যাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এমন আরও হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই অব্যাহত থাকবে।’

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আতাউর রহমান খানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় তাঁর সনদ প্রত্যয়নের আগে এনএসআই তদন্ত করে। এনএসআই এ বিষয়ে নেতিবাচক মত দিলে তাঁর সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে এনএসআইয়ের সদর দপ্তরে যোগাযোগ করে ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেদন সংগ্রহ করায় তাঁর সনদও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর চাকরির শেষ দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দেননি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই তিনি প্রতিবেদন নিজে এনেছেন, তাঁর সপক্ষে সব কাগজপত্র আছে।