আড়াই বছর পর কারামুক্ত ইসমাইল হোসেন সম্রাট

জামিনে মুক্তির পর ইসমাইল হোসেন চৌধুরীকে (সম্রাট) ফুল দিয়ে স্বাগত জানান তাঁর এক রাজনৈতিক সহকর্মী। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: সংগৃহীত

আড়াই বছর আগে আলোচিত ক্যাসিনো–কাণ্ডে গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী (সম্রাট) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ চার মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁর জামিনের কাগজপত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএসএমইউ) পাঠানো হয়। এরপরই তাঁর কেবিনের সামনে থেকে কারারক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে বিএসএমএমইউ সূত্র বলছে, কারামুক্ত হলেও আজ তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগার থেকে হাসপাতালে জামিনের কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকদের পরামর্শে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইসমাইল হোসেনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে বলে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। তবে আজকে (বুধবার) তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না।

২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে অবৈধভাবে ক্যাসিনো কারবারের বিষয়টি সামনে আসে। ওই ক্লাব পরিচালনা করতেন যুবলীগের সে সময়ের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তিনি ছিলেন ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠজন। পরে বেরিয়ে ঢাকায় ক্যাসিনো কারবারে হাত রয়েছে যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের।

এরপর ১৭ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ইসমাইল হোসেন ও তাঁর সহযোগী আরেক যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের সময় ইসমাইল হোসেন ও আরমান মদ্যপ ছিলেন। তাঁদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন।

দুজনকে ঢাকায় আনার পর ইসমাইল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখানে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ইসমাইল হোসেনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পরে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে রমনা থানায় মামলা করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) আইনে মামলা করে। আর ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ১০ এপ্রিল অর্থ পাচার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকার পৃথক দুটি আদালত থেকে জামিন পান ইসমাইল হোসেন। পরদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাঁকে জামিন দেন আদালত।

আজ সকালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ইসমাইল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। এই মামলা তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল দুদক। তাতে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আগামী ৯ জুন এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন রেখেছেন আদালত।

জামিনের বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণে আদালত ইসমাইল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। ৯ জুন পর্যন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত শর্ত দিয়ে বলেছেন, ইসমাইল হোসেন আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তাঁকে তাঁর পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।