ইউএনও বদলি হতেই পুকুর দখলে নিলেন যুবলীগের নেতা

বেদখলে ছিল সরকারি একটি পুকুর। সবে এক মাস আগে সেটি দখলমুক্ত করে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ইজারা দেওয়া হয়। 

 তবে যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুকুরটি দখলমুক্ত করেছিলেন, তাঁর বদলি হওয়ার খবর পেয়েই পুকুরটি দখলে নিয়েছেন যুবলীগ নেতা। রাজশাহীর তানোরে উপজেলায় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যুবলীগের ওই নেতার নাম জুবাইয়ের ইসলাম। তিনি সংগঠনের তানোর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জুবাইয়ের ইসলাম গতকাল শনিবার রাজশাহীতে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসে বলেন, যে সমিতির নামে পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয়েছে, তাদের নামে দুটি পুকুর আগেই ইজারা দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী তারা আর দরপত্র ফেলতেই পারবে না। কিন্তু সম্পূর্ণ অনিয়ম করেই পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর কার্যালয়ে বসেই জুবাইয়ের ইসলাম মুঠোফোনে তাঁর লোকজনকে ওই পুকুরে আরও মাছ ছাড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনায় তিনি বলেন, আজ রোববার এক কেজি ওজনের রুই মাছ ছাড়া হবে। এরপর ছাড়া হবে কাতল মাছ।

উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, তানোর উপজেলার জোত গোকুল মৌজার ওই পুকুরটি ৩ একর ৭৩ শতাংশ আয়তনের। এত দিন সেটি বেদখল ছিল। পুকুরটি দখলমুক্ত করে গত ২৮ নভেম্বর কমিটি ‘শিবজাইত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’কে ইজারা দেয়। 

সমিতির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার এই পুকুরে ২০ মণ মাছ ছাড়া হয়। এর আগে যুবলীগের নেতা জুবাইয়ের ইসলামের নেতৃত্বে পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হতো। সেখান থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পেত না।

শিবজাইত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁরা বৈধভাবে পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন। এ জন্য সরকারকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। তাঁরা পুকুরে মাছও ছেড়েছেন। এখন ইউএনও বদলির খবর শুনেই যুবলীগ নেতা আবার মাছ ছেড়েছেন। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তানোরে বেদখল পুকুর আছে ৯৮০টি। এর মধ্যে ২৩৭টি গত অর্থবছরে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এতে দেড় কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। 

মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, তানোরের ইউএনও নাসরিন বানু খাস পুকুর দখলমুক্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বদলির আদেশ হয়েছে। এই খবর শুনেই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোকজন গতকাল সকালে ১১৫ কেজি সিলভার কার্প ও রুই মাছ ছেড়ে পুকুরের দখল নেন। 

তবে যুবলীগের নেতা জুবাইয়ের ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, পুকুরটি আগে থেকে ‘সাদিপুর পূর্বপাড়া মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেড’–এর দখলে ছিল। এই সমিতির সভাপতি তাঁর বড় ছেলে সারোয়ার জাহান। মামলা চলমান থাকার কারণে পুকুরটির ইজারা দেওয়া স্থগিত ছিল। 

জুবাইয়ের ইসলাম বলেন, এই সমিতিতে ২২টি আদিবাসী পরিবার আছে। তাদের সঙ্গে নিয়েই আবার মাছ ছাড়া হয়েছে। এবার যখন পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয় তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন দাবি করে জুবাইয়ের বলেন, তাঁর ছেলের সমিতির পক্ষ থেকে দরপত্র জমা দিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দরপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া ইউএনও নাসরিন বানু বলেন, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী পুকুরগুলো মৎস্যজীবীদের ইজারা দেওয়া হয়েছে। দরপত্র নেওয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি যাচাই–বাছাই করে ইজারা দিয়েছে। এতদিন কেউ আপত্তি করেননি। এখন তারা ওই পুকুরে কোনো ভাবেই মাছ ছাড়তে পারেন না।