ইউএনওকে 'হত্যাচেষ্টা'র অভিযোগে যুবলীগ নেতা কারাগারে

বরগুনার আমতলীতে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ওই মামলায় যুবলীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে যুবলীগ নেতার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলা করা হয়েছে।

গত রোববার বিকেলে আমতলী থানায় মামলাটি করেন ইউএনও মনিরা পারভীন। এতে আমতলী পৌর যুবলীগের সভাপতি আইনজীবী আরিফুল হাসানসহ (৩৩) মোট তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার পাশাপাশি সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগ করা হয়।

জানতে চাইলে ইউএনও মনিরা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার বেলা দেড়টার দিকে তিনি আমতলী লঞ্চঘাটে গিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন। পাশাপাশি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে কি না, তা তদারক করছিলেন। এ সময় দেখতে পান, ঢাকাগামী সুন্দরবন-৭ লঞ্চে ধারণক্ষমতার চার গুণ বেশি যাত্রী তোলা হয়েছে। আর কোনো যাত্রী না উঠিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনি সুপারভাইজার মো. মইনুলকে নির্দেশ দেন। এ সময় মইনুল তাঁকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান। মইনুলের পক্ষ নিয়ে এ সরকারি কাজে বাধা দেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগের নেতা আরিফুল হাসান। একপর্যায়ে তিনি হত্যার উদ্দেশ্যে ইউএনওর দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন।

তবে আরিফুলের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মূলত এলাকায় রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে আগের কিছু ঘটনার জের ধরে ইউএনও আরিফুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁরা জানান, যুবলীগের নেতা আইনজীবী আরিফুল তাঁর এক বন্ধুকে লঞ্চে তুলে দিতে শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমতলী লঞ্চঘাটে যান। এ সময় সেখানে ইউএনও মনিরার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি ইউএনওকে দেখে সালাম দেন। কিন্তু ইউএনও সালাম গ্রহণ না করে বলে ওঠেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করো?’ একপর্যায়ে তিনি আরিফুলকে গালাগাল করেন। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হলে ইউএনও তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

আরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদের মিয়া আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আইনজীবী আরিফুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ। স্থানীয় রাজনীতির একটি পক্ষের চক্রান্তের শিকার তিনি। ওই দিনের ঘটনার ভিডিও চিত্র আমরা দেখেছি। তাতে আরিফের কোনো ত্রুটি আমরা দেখিনি। ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ চাঙা হয়েছে। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় আরিফুলের মুক্তির দাবিতে এলাকায় মিছিল বের করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ। ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবিত’ বলে উল্লেখ করেন অংশগ্রহণকারীরা। এর কিছুক্ষণ পর পাল্টা মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ইউএনওর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার বিকেলে ইউএনও মনিরা পারভীন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এতে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি যুবলীগের নেতা আইনজীবী আরিফুল হাসান, তাঁর সহকারী রায়হান (২২) ও লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুল (৪২)। আরিফুল ও রায়হানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।