ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ৬০ একরের ফসলের ক্ষতি
রংপুরের বদরগঞ্জের রামনাথপুর ঘাটাবিল এলাকায় দুটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে অন্তত ৬০ একর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, ওই এলাকার কৃষিজমিতে এমবিএল ও এসবিবি নামের দুটি ইটভাটা ১০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এগুলো বন্ধের দাবিতে এলাকার কৃষকেরা বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করলেও কাজ হয়নি। কয়েক মাস আগে এগুলোতে ইট পোড়ানো শুরু হয়। চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে ধানে ইতিমধ্যে থোড় এসেছে। আর ২০ থেকে ২৫ দিন পরেই তা ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকেরা।
কৃষকদের অভিযোগ, ছয়-সাত দিন আগে ওই ভাটা দুটির আগুন নেভানো হয়। এ সময় ভাটার চিমনি দিয়ে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় আশপাশের ৬০ একর জমির ধান ঝলসে গেছে।
ঘাটাবিল মণ্ডলপাড়া গ্রামের কৃষক দশরথ রায় জানান, তিনি ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন। ধানগাছে সবেমাত্র থোড় এসেছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখতে পান ভাটার গ্যাসে তার পুরো খেত ঝলসে গেছে। তিনি এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক রতন দাস জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন ৪০ হাজার টাকা খরচ করে। ভাটার কারণে ধানখেত ঝলসে যাওয়ায় সেখান থেকে তিন মণ ধানও তিনি পাবেন না। এসবিবি ইটভাটার ব্যবস্থাপক নকুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘কৃষকদের ক্ষতির চিন্তা করে আগাম ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। তার পরও যদি ক্ষতি হয়, তাহলে আমাদের করার কী আছে।’
এমবিএল ইটভাটার ব্যবস্থাপক মেনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন মেনে ইটভাটা কৃষিজমিতে নির্মাণ করেছি। এতে কারও ক্ষতি হলে আমাদের করার কিছুই নেই।’ ভাটার মালিক আইয়ুব আলী বলেন, ‘কোন কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সব সময় সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ভাটা চালাচ্ছি।’
ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) সেকেন্দার আলী বলেন, ইটভাটা বন্ধ করার সময় চিমনি দিয়ে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার কারণে কৃষকদের বোরো খেত ঝলসে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ অবৈধ। ভাটার লাইসেন্স দেওয়ার আগে প্রশাসনের কৃষকদের কথা চিন্তা করা উচিত। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখছি।’