ইয়াবার মামলায় জব্দ ৪ গরু নিলামে
আগে থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৪–এ (র্যাব) একটি দলের কাছে খবর ছিল, গরু ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্র ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে ঢাকায় ঢুকবে। সেদিন (গত ১৮ ডিসেম্বর) রাত আটটার দিকে র্যাবের দলটি রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকার সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে অবস্থান নেয়।
রাত দুইটার দিকে গরুবোঝাই একটি ট্রাক কল্যাণপুর ঈগল কাউন্টারের সামনে এসে থামে। পরে ওই ট্রাক থেকে এক কোটি টাকা মূল্যের ৩৭ হাজার ৬০০টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করে র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় ট্রাকে থাকা ইউনুছ নামের আসামিকে। আরও জব্দ করা হয় ট্রাকে থাকা চারটি গরু, মাদক বিক্রির ১২ হাজার ৯২০ টাকা এবং একটি কার্গো ট্রাক।
গরুর মালিক খুঁজে বের করার জন্য দেশের সব থানায় বেতার বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু ১২ দিনেও গরুর মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ ডিসেম্বর দারুস সালাম থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়, থানা এলাকায় গরু লালন-পালনের কোনো সরকারি খোয়াড় নেই। র্যাব অফিসে গরু রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে গরুগুলো পরিচর্যার অভাবে মারা যেতে পারে। শীতকালে গরু নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে চারটি গরু নিলামে বিক্রি করে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখা দরকার।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত বুধবার চারটি গরু নিলামে বিক্রি করার অনুমতি দেন। একই সঙ্গে গরু বিক্রির টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
১ জানুয়ারি গরুগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আসাফুদ্দৌল্লাহ সরদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গরুগুলো এখন আছে র্যাব-৪-এর হেফাজতে। এগুলো নিলামে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
জব্দ করা চারটি গরুর বর্ণনা তুলে ধরে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দারুস সালাম থানা-পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চারটি গরুর মধ্যে তিনটি গরুর গায়ের রং লাল, একটির সাদা। চারটি গরুর শিং ছয় ইঞ্চি।
ইতিমধ্যে আসামির কাছ থেকে জব্দ করা মাদক বিক্রির ১২ হাজার ৯২০ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
গরু ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা
পুলিশ ও মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ৩৭ হাজার ৬০০টি ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়া মো. ইউনুছের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফে। র্যাব ও পুলিশ লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছে, ইউনুছ পেশাদার একজন মাদক ব্যবসায়ী। বহুদিন ধরে তিনি ঢাকায় ইয়াবা এনে বিক্রি করছিলেন। আদালত ইউনুসকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
এসআই মোহাম্মদ আসাফুদ্দৌলাহ সরদার আদালতকে লিখিতভাবে জানান, আসামি ইউনুছ কার্গো ট্রাকে গরু আনার নামে দীর্ঘদিন ধরে দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন। পরে ইয়াবাগুলো ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এলাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করতেন।
এসআই জানান, অভিনব কায়দায় মাদক ব্যবসায়ীরা ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসছে, ধরাও পড়ছে। এই চক্রও গরু ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে আসছিল। এখন পর্যন্ত চক্রের একজনকে ধরা গেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।