এএসআই আশেকের ৫ দিনের, কনস্টেবল হারুনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে তোলা হয়
প্রথম আলো

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মো. রায়হান আহমদ (৩৪) নিহত হওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আশেক এলাহীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সময় তিন দিনের রিমান্ড শেষ হওয়া বরখাস্ত কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদের দ্বিতীয় দফায় আরও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জিয়াদুর রহমান এ আদেশ দেন। পুলিশের দুই সদস্যকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আশেক এলাহীর পাঁচ দিনের ও হারুনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  

যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পিবিআই জানায়, ২৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার সাময়িক বরখাস্ত কনস্টেবল হারুন অর রশিদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাঁর রিমান্ড শেষ হয়। বুধবার রাতে গ্রেপ্তার এএসআই আশেক এলাহীর সঙ্গে হারুনকেও আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দরবাজার ফাঁড়ি প্রত্যাহার হওয়া এএসআই আশেক এলাহীর সাত দিন এবং হারুনকে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আশেকের পাঁচ দিন ও হারুনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সিলেট নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন রায়হান মারা যান। রিকাবিবাজার এলাকার একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে চাকরি করতেন রায়হান। এ ঘটনায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে নির্যাতন করার সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর আকবর পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যান।

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত পিবিআইয়ের ওপর ন্যস্ত হলে রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর ১৯ অক্টোবর ফাঁড়ির সেন্ট্রি পোস্টে কর্তব্যরত তিনজন কনস্টেবল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে রায়হানকে নির্যাতন করার বর্ণনা ও নির্যাতনকরীদের নাম বলেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে এএসআই আশেক এলাহী বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হানকে তুলে এনেছিলেন বলে উল্লেখ ছিল। জবানবন্দির সূত্র ধরে বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ২০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর হারুনকে ২৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ওই দিন রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

নগর পুলিশ সূত্র জানায়, আকবরের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরের তিন সদস্যের একটি কমিটি। আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ফাঁড়ির 'টুইআইসি' পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিনকে ২১ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আকবরের পলায়নের ঘটনায় সমালোচনার মুখে সরানো হয় পুলিশ কমিশনার পদে থাকা গোলাম কিবরিয়াকে। তাঁর জায়গায় পুলিশের স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি পদে থাকা মো. নিশারুল আরিফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।