একাই কোপালেন ৫ জনকে, স্ত্রীসহ নিহত ৩

রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাদল ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগমের মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমাকে কুপিয়ে জখম করেন বাদল।

নরসিংদীর শিবপুরে স্ত্রীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক বাদল মিয়া
প্রথম আলো

নরসিংদীর শিবপুরে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও বাড়িওয়ালাসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কুমরাদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কী থেকে এমন হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা বলতে পারছেন না কেউ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মো. বাদল মিয়াকে (৫০) আটক করেছে।

বাদল মিয়া শিবপুর উপজেলার পুটিয়ার কুমরাদী এলাকার একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা ও তাঁর আগের সংসারের ৪ সন্তানকে নিয়ে ওই এলাকার তাইজুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাদলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার জাঙ্গালিয়া এলাকায়।

হত্যার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়
প্রথম আলো

নিহত তিনজন হলেন বাদলের দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা বেগম (৪০), ওই বাড়ির বাড়িওয়ালা তাইজুল ইসলাম (৭০) ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬০)। এ ছাড়া গুরুতর আহত দুজন হলেন বাদলের ছেলে সোহাগ (১৫) ও বাড়িওয়ালা তাইজুল ইসলামের মেয়ে কুলসুম (২৬)। আহত দুজনকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাদল ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগমের মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমাকে কুপিয়ে জখম করেন বাদল। এ সময় তাঁর ছেলে সোহাগ এগিয়ে গিয়ে বাড়িওয়ালা তাইজুল ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সাহায্য চান। এ সময় বাড়িওয়ালার মেয়ে কুলসুম কী হয়েছে জানতে ঘটনাস্থলে যান। পরে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সোহাগ, তাইজুল, মনোয়ারা ও কুলসুমকে ওই ছুরি দিয়েই এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন বাদল। সকাল ৭টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদলকে আটক করে এবং আহত ৫ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠায়। নাজমা ও মনোয়ারাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে তাইজুল, সোহাগ ও কুলসুমকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাইজুলের মৃত্যু হয়।


শিবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মীর শিবলী কায়েস বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদল নামের একজনকে আটক করি এবং আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমা ও মনোয়ারাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাদের লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ওই হাসপাতালেরই মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাইজুলের লাশও আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, বাদল নিজেও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাঁকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দুজন নারীকে আমাদের হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। অন্য তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে। তাদের পেটে, মুখে, গালে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’

ঘটনা সম্পর্কে পুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুর রহমানের ভাষ্য, ভোরের দিকে পাশের ঘর থেকে মো. বাদল মিয়া ও নাজমা বেগমের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও চিৎকারের শব্দ শুনে সোহাগ। সে দৌড়ে গিয়ে বাঁশ দিয়ে দরজা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকে। এ সময় সে দেখে, তার বাবার হাতে রক্তাক্ত ছুরি আর সৎ মা অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। ওই সময় একটি ইটের টুকরো দিয়ে ঢিল মেরে বাবার হাতের ছুরি ফেলে দেয় সোহাগ। পরে বাড়িওয়ালাসহ তিনজনকে ডেকে আনেন। ওই ছুরি দিয়েই তাদেরও কুপিয়ে জখম করেন বাদল মিয়া। এ সময় সোহাগ বাঁশ দিয়ে তার বাবা বাদলের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।


শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। বাদল নামের এক ব্যক্তি একাই পাঁচজনকে কুপিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। নানা দিক থেকে ঘটনার কারণ ও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।