এক মাসেই ১২টি লাশ চুরি

লাশ
প্রতীকী ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বটতলী বাজার। সেখান থেকে ৩০০ গজ এগোলে ইটখোলা কবরস্থান। নিচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা কবরস্থানটির চারপাশে ফসলি জমি, ৩০০ গজের ভেতর কোনো বাড়িঘর নেই।

গত বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তদারককারী মোতাহার হোসেন আগাছা পরিষ্কার করছেন। তিনি জানালেন, ২ ডিসেম্বর রাতে কবরস্থানটি থেকে একসঙ্গে সাতটি লাশ চুরির পর তাঁরা নজরদারি বাড়িয়েছেন। এর অংশ হিসেবে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।

শুধু ইটখোলায় নয়, গত এক মাসে এই উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচর কবরস্থান থেকে তিনটি ও কলাতিয়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি কবরস্থান থেকে আরও দুটি লাশ চুরির খবর পাওয়া গেছে। একের পর এক এভাবে লাশ চুরির ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কবর থেকে লাশ চুরি হওয়ার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

ইটখোলা কবরস্থান সূত্রে জানা গেছে, ২ ডিসেম্বর চুরি যাওয়া লাশগুলো ছিল তারানগর ইউনিয়নের আবদুল করিম, সিরাজুল ইসলাম, সাহাবুদ্দিন মিয়া, ফজলে করিম, আমির হোসেন, ফজিলাতুন্নেসা ও রওশন আরা বেগমের। এর মধ্যে দুটি লাশ এক সপ্তাহ আগে এবং বাকি পাঁচটি লাশ চুরির প্রায় ১৫ দিন আগে দাফন করা হয়েছিল।

ইটখোলা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, এর আগে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। এতে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাতের আঁধারে কবর থেকে লাশ চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তুচ্ছ ঘটনা নয়। কখন যেন আবার কার লাশ কবর থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

একই এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, বছরখানেক আগে দুটি লাশ কবরস্থান থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তখন সবাই ভেবেছিল হয়তো শিয়াল-কুকুর নিয়ে গেছে। কিন্তু এবার ঘটনার পরদিন সকালে খোঁড়া কবরগুলোর আশপাশে মানুষের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। এবারে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কবর থেকে লাশ চুরি হয়েছে।
ইটখোলা কবরস্থানের তদারককারী মোতাহার হোসেন বলেন, সম্ভবত একটি চক্র কবর থেকে লাশ তুলে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে। কবরস্থানে নজরদারি ও রাতে পর্যাপ্ত বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা দরকার বলে জানান তিনি।

মুগারচর কবরস্থানেও একাধিকবার লাশ চুরির ঘটনা ঘটেছে। কঙ্কাল চোরাকারবারে জড়িত একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি ধারণা করছেন।
সোলায়মান জামান, রোহিতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি

ইটখোলা এলাকার জামিআতুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি ফাহিম আহমদ বলেন, একত্রে সাতটি লাশ কবর থেকে চুরি হওয়ার ঘটনার পর এলাকাবাসীকে নিয়ে ৪ ডিসেম্বর একটি সভা হয়েছে। সভায় তারানগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রায়হানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সভায় ইটখোলা কবরস্থানের চারপাশে উঁচু দেয়াল নির্মাণ, সার্বক্ষণিক পাহারা, পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা রাখাসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোহিতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান জামান বলেন, মুগারচর কবরস্থানেও একাধিকবার লাশ চুরির ঘটনা ঘটেছে। কঙ্কাল চোরাকারবারে জড়িত একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি ধারণা করছেন।

এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক বলেন, ইটখোলা কবর থেকে সাতটি লাশ চুরি হওয়ার পর থেকে ইউনিয়নে কবরস্থানগুলোতে নজরদারি ও প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রশাসনের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।