এক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এত কাণ্ড...

প্রতীকী ছবি

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার একটি মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) নিয়োগ নিয়ে পদে পদে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে নিয়োগপত্রের বিপরীতে ওই শিক্ষক যোগদান করার তথ্য জানালেও তাঁকে ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ কোনো দিন দেখেননি, তিনি কোনো দিন ক্লাস নেননি, বেতনও পাননি। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়েছে এই নিয়োগ ঘিরে। প্রশাসন তদন্ত করে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। জড়িত অভিযোগে মাদ্রাসা সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

যে ব্যক্তির নিয়োগ নিয়ে এত কাণ্ড, তাঁর নাম ঝন্টু চন্দ্র ঢালী। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার রক্ষাচন্ডী গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগ আছে, তিনি সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিয়ে চলতি বছরের মার্চে ওই পদে যোগ দেওয়ার জন্য মাদ্রাসা সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীর সঙ্গে সমঝোতা করেন। তবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর তারিখ উল্লেখ করে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর যোগদান দেখানো হয় ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে।

এই অভিযোগ তদন্ত করতে পাথরঘাটা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এফ এম জাফর সাদিককে প্রধান করে একটি কমিটি হয়। কমিটি এর সত্যতা পায় বলে কমিটির প্রধান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কালিপুর কালিবাড়ি দারুচছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. হুমায়ুন কবিরও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাথরঘাটা ইউএনও কার্যালয় ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) পদে নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই, ২৪ আগস্ট ও ১৩ অক্টোবর দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে কেউ আবেদন করেছেন এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ মাদ্রাসায় নেই। কোনো শিক্ষকও এ ব্যাপারে জানেন না। ওই পদে নিয়োগের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে মাদ্রাসা সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীর সঙ্গে ঝন্টু চন্দ্র ঢালীর সাড়ে ৯ লাখ টাকায় মৌখিক চুক্তি হয়। এর ভিত্তিতে আগের তারিখে নিয়োগপত্র দেওয়া ও যোগদানের ঘটনা ঘটে।

মাদ্রাসার হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা গেছে, ঝন্টু চন্দ্র ঢালী নামে কোনো শিক্ষকের নাম হাজিরা খাতায় নেই। ফলে তাঁর কোনো সইও কোথাও নেই।
এই নিয়োগ ঘিরে আরেকটি অনিয়মের অভিযোগ হচ্ছে, ঝন্টুর এমপিওভুক্তির আবেদনে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান হাওলাদারের সই আছে। সইটি চলতি বছরের ১ এপ্রিলের। অথচ আবদুর রহমান হাওলাদার ২০১৪ সালের ৬ মার্চ মারা গেছেন।

মাদ্রাসার অফিস সহকারী বিনয় ভূষণ গোলদার বলেন, ‘কালিপুর কালিবাড়ি দারুচছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীসহ ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ১৩টি ফাইল আমার কাছে রক্ষিত আছে। এর মধ্যে ঝন্টু চন্দ্র ঢালীর কোনো ফাইল বা তথ্য নেই। তিনি এখানকার শিক্ষক, এমন তথ্যও জানা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝন্টু বলেন, ‘অভিযোগ সত্য। তবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। মীমাংসায় আমি টাকা ফেরত পেলে ওই পদ ছেড়ে দেব। আমার কোনো দাবি থাকবে না।’
বক্তব্য জানতে মাদ্রাসা সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ১০ মিনিট পর কথা বলবেন জানান। এরপর তাঁকে বারবার কল করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ ও হাতেমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও দুই দিন ধরে সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পাথরঘাটার ইউএনও ও ওই মাদ্রাসার সভাপতি (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ওই মাদ্রাসায় গায়েবি নিয়োগের তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপার মহিববুল্লাহ সিদ্দিকীকে ২১ সেপ্টেম্বর সোমবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।