স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘আইস’ উদ্ধার

ঢাকার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়ছবি: সংগৃহীত

জিগাতলা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পর ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ‘আইস’। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ খবর জানায়। এই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরও পাঁচজন গ্রেপ্তার আছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চন্দন রায়, সিরাজ, অভি, জুয়েল, রুবায়েদ ও ক্যানি। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬০০ গ্রাম ‘আইস’ উদ্ধার করা হয়। গতকাল বুধবার গেন্ডারিয়া, গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়ে শক্তিশালী। ইয়াবার প্রধান উপকরণ মিথাইল অ্যামফিটামিন। ইয়াবায় মিথাইল অ্যামফিটামিনের ব্যবহার হয় ২০ শতাংশ। আইস বা ক্রিস্টাল মেথে মিথাইল অ্যামফিটামিনের ব্যবহার শতভাগ। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১০ গ্রাম আইসের দাম ১ লাখ টাকা। প্রতিবার আইস সেবনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনে এই মাদকের ব্যবহার রয়েছে। এটি ধোঁয়ার মাধ্যমে, ট্যাবলেট আকারে বা ইনজেকশনের মতো সেবন করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা।

গেন্ডারিয়া থেকে উদ্ধার করা মাদক ‘আইস’
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চন্দন রায় বিমানে করে এই মাদক বাংলাদেশে আনেন। তিনি তাঁর প্রবাসী আত্মীয় শংকর বিশ্বাসের মাধ্যমে আইস এনে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের কাছে বিক্রি করছিলেন। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ছোট ছোট প্যাকেটে আসা আইস বা ক্রিস্টাল মেথ পরিবারের লোকজনদের দেখিয়ে চন্দন রায় বলতেন, স্বর্ণ গলানোর কাজে এটি ব্যবহার হয়। তবে কবে থেকে তাঁরা এই মাদক আমদানি করছেন, ক্রেতার সংখ্যা কত, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের ধারণা, মাদকটি অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় এখনো এর ব্যাপ্তি ততটা নয়।

বাংলাদেশে আইস বা ক্রিস্টাল মেথের খবর প্রথম পাওয়া যায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। মোহাম্মদপুর থেকে আইসসহ রাকিব উদ্দিন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে জিগাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার নিচতলায় অভিযান চালিয়ে ল্যাবের সন্ধান মেলে। ওই ঘটনায় হাসিব মোহাম্মদ মোয়াম্মার রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোয়াম্মার মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকায় নিজেদের ভবনের নিচে ওই গবেষণাগার গড়ে তুলেছিলেন।

ওই সময় আইস, ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ই–মেইলও করেছিল। এর মাস কয়েক মাস পর বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তার হন একজন নাইজেরীয় নাগরিক। নিষিদ্ধ ডার্ক নেটের সদস্য ওই ব্যক্তি আফ্রিকা থেকে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ এনে এ দেশে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৫২২ গ্রাম আইস বা ক্রিস্টাল মেথ।

আইস বা ক্রিস্টাল মেথ অল্প সময়ের জন্য মানবদেহে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। দীর্ঘ মেয়াদে এই মাদক সেবনে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, দাঁত পড়ে যাওয়াসহ নানা রোগ হতে পারে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।